Important Announcement
PubHTML5 Scheduled Server Maintenance on (GMT) Sunday, June 26th, 2:00 am - 8:00 am.
PubHTML5 site will be inoperative during the times indicated!

Home Explore BS25_banglasahitya.net

BS25_banglasahitya.net

Published by Sourav Mondal, 2022-04-19 14:27:34

Description: BS25_banglasahitya.net

Search

Read the Text Version

মাঙ্গলিক গল্প নন্দিনী আরজু রুবী www.banglasahitya.net

মাঙ্গলিক পৃষ্ঠা || 152 --- নন্দিনী আরজু রুবী মাঙ্গলিক মেঘ আর রোদ্দুরে লুকোচুরি চলছিল,এখন ভরা দুপুর, আকাশে ছেঁড়া মেঘের আনাগোনা। উফফ্ ক'দিন খুব বৃষ্টি হয়ে গেলো। কার্তিকে এমন বৃষ্টি এবার মল মাসের পূজা আশ্বিন শেষ করে শুরু হয়েছে। আজ বিজয়া দশমী এটা তাঁতিপাড়া ক'ঘর হিন্দুর বাস। প্রতি বছর ছোট করে পূজার আয়োজন করে গ্রামবাসী। এপাড়ায় tমুসলিম বেশি কিন্তু পরস্পর সৌহার্দ্য বিরাজ করছে। eইছামতী নদী পারে এই রাধানগর গ্রাম। সুবিশাল এক অশ্বত্থ গাছ বহু প্রাচীন। তার তলায় মেলা .nবসেছে হইচই কাঁসর ঢাকের বাদ্য-বাজনায় মুখর। ityaশশী একটা কাঠি হাতে বসে আছে। নিকোনো উঠোনে নতুন ধান রোদে শুকোতে দিয়েছে। মৌ-মাতাল hগন্ধে ভরে উঠেছে চারিপাশ। saমাঝে মাঝে মুরগিহাঁস ধান খাওয়ার জন্য ছুটে আসছে। শশী তাড়াচ্ছে আর মনোযোগ দিয়ে কিছু laদেখছে, তার কোলের উপর রাখা একটা ছড়াছবির বই। gশশীর ছোট বোন তপতীর বই এটা, সে আজ পুজো মণ্ডপে সমবয়সি বাচ্চাদের সাথে পুজো দেখতে nগেছে। তপতী শশীর চাইতে অনেক ছোট সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। শশীর বড় ডাগর চোখে রাজ্যের Baকৌতূহল। ছবি দেখছে নিবিষ্ট মনে। শ্যামলা গায়ের রঙ, প্রতিমার মত মিষ্টি মুখের গড়ন শশীর, অন্য এক অলৌকিক আলোতে উদ্ভাসিত তার মুখ। মা চেঁচিয়ে ডাকলেন, \"কিরে চোখে দেখতে পাস না ধান যে মুরগির ঝাঁক খেয়ে গেলো রে... কোনো কাজ যদি একে দিয়ে হয়।\" যাকে বলা হচ্ছে তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই, চোখ তুলে তাকালো না পর্যন্ত নিজেতেই মগ্ন। মা জানেন বলে কোন লাভ নেই তবু অজান্তেই চ্যাঁচামেচি করেন। মাঠে কাজ শেষে শশীর বাবা ফিরেছে। মেয়ের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। খেয়েছে কিনা ইশারায় জিজ্ঞাসা করলেন। শশী হেসে ঘাড় কাত করে সন্মতি জানালো। শশীদের বেশ কিছু জমিজমা আছে, হাল নাঙ্গল চাষাবাদ এসব শশীর বাবা দেখা শোনা করেন হাঁস- মুরগি, গরু-ছাগল ঘরদোর শশীর মা সামলান। তাদের কোন ছেলে সন্তান নাই। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 153 শশী নিজের মত চলে সে ছটফটে হাসি খুশি একদম উচ্ছ্বল পাহাড়ি ঝর্নার মতো,শুধু অপার এক নিস্তব্ধতা ওকে ঘিরে রেখেছে যেন সারাক্ষণ। নিজের খেয়ালে মশগুল। নদী পাড় ঘেঁষে গ্রাম, নদীর সাথে হৃদ্যতা গড়ে উঠেছে সবার। শশী বেণী দুলিয়ে এক ছুটে নদীর কাছে হাজির। ইছামতীর সেই আগের রূপ নাই, শীর্ণকায়া হাজামজা কচুরিপানা আর বালিচর। হাঁস সাঁতার কাটছিলো, সূর্য ডোবা মেঘেদের গায়ে ম্লান লালচে আলো। নদীর পানিতে কিছু পরিস্কার জায়গায় আকাশের ছায়া অপূর্ব। শশীর সরল চোখে অপার মুগ্ধতা। হাঁসগুলোকে তাড়িয়ে নিয়ে বাড়ি আসছে সে... দুলাল হালদারের বাড়ি পাশের গাঁয়ে। এপাড়ায় পূজা দেখতে এসেছে। নদীর পাড়ে চঞ্চল বালিকা, হাঁসের ঝাঁক আর শেষ গোধূলি আকাশের পটভুমি। সে অভিভূত হয়ে গেলো। শশী তার পাশদিয়ে যাওয়ার সময় দুলাল তার নাম জিজ্ঞেস করলো, \"কী নাম তোমার?\" কোন উত্তর নাই, t\"কোন বাড়ি তোমাদের?\"শশী ডাগর চোখ তুলে তাকালো রাজ্যের সরলতা, মুখে স্মিত হাসি, eকোনো কথার উত্তর না দিয়ে শুধু ঘাড় নেড়ে, হাঁসের পিছু পিছু বাড়ি ফিরে এলো। দুলাল অবাক হয়ে .nশুধু চেয়ে রইলো। বালিকার নিরবতা সরল সৌন্দর্য্য তাকে বিমোহিত করে দিলো। aআসন্ন সাঁঝের নৈবেদ্য ঘরে ঘরে শঙ্খ ধ্বনি বাজছে। পাখিদের কলরব নীড়ে ফেরা, অশ্বত্থ গাছে ityকিচির মিচির শব্দ। দূর থেকে ধূপগন্ধী বাতাস আর মঙ্গল ঘন্টা ধ্বনিতে দুলাল সচকিত হয়ে উঠলো। hশশীর সরল চোখ মোহাবিষ্ট করে দিয়েছিল তাকে। aপাঁচ বছর পরে। আজ শশীদের বাড়িতে আনন্দের আমেজ। উঠোনের কোণে কলাগাছ পোতা lasবেলপাতা ফুল আর আল্পনায় সাজানো। আঙ্গিনায় প্যাণ্ডেল, রান্নার আয়োজন হাকডাক সরগরম। ফুল পাতা দিয়ে সাজানো গেট...। ngআজ শশীর বিয়ে। aভিন গাঁয়ে বিয়ে ঠিক হয়েছে।বাড়িতে আত্মীয় পরিজন, আজ শশীকে সোনার প্রতিমার মতো লাগছে। Bরাঙাচেলি আর ফুল চন্দনের সাজ। কাজল কালো চোখে অন্য আলোর ঝিলিক। হঠাৎ বর এসেছে বর এসেছে শোনা গেল।তারা বান্ধবীদের নিয়ে বরণ করতে গেলো। দুলাল এসেছে বর যাত্রি হয়ে। নিরঞ্জন হঠাৎ দেখেই শশীকে পছন্দ করে। বরের বাবা বোন ভিতর বাড়িতে গেলেন নিরীক্ষণ দিতে। শশী গড় হয়ে প্রনাম করলো। আজকে প্রথম দেখলেন তিনি শশীকে! শ্বশুরমশাই জিজ্ঞেস করলো, \" কি নাম তোমার মা? কোন ক্লাসে পড়ো?\" শশী নত মুখে নিরুত্তর.. \"কি হলো! কথা বলছোনা কেন? \" শশী শুধু তাকিয়ে রইলো কোন প্রশ্নের উত্তর দিলো না। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 154 কিছুক্ষণ পরে বিমল বাবু রেগেমেগে বেরিয়ে এলেন। ছেলে নিরঞ্জনকে বললেন, \"এ বিয়ে হবে না।\" নানা প্রশ্ন আর শোরগোল শুরু হয়ে গেলো। নিরঞ্জন কিছুদিন আগে রাধানগর গ্রামে এসেছিলো। শশীকে দেখে তার খুব পছন্দ হয়ে যায়। বিয়ে করতে মনস্থির করে। এবং এই বিয়ে স্থির হয়। দুলাল ঘটনা কী! কেন বিয়ে হবে না জানতে বাড়ির ভিতরে ঢুকে চমকে ওঠে... শশী বধুবেশে চৌকাঠে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই সরল চোখ পাথরের প্রতিমার মতো স্থির ভাবলেশহীন। কোন কিছু সে বুঝতে পারছে না। এই কোলাহল বিয়ে ভাঙা, শশীর মা কান্নায় ভেঙে পড়েছে। বাবা ভীষণ ভাবে মুষড়ে পড়েছেন। সবার মন খারাপ। শুধু শশীর মুখে সেই স্মিত হাসি, বোধগম্যতাহীন সরলতায় উদ্ভাসিত। কিছু বুঝতে পারছে না কেউ তাকে বোঝাতে আসেনি। দুলাল শশীর বাবার কাছে এগিয়ে যায় তার হাত ধরে বলে \"শশীকে আমি বিয়ে করবো।\" চারিদিকে tউলুধ্বনির মধ্যে দুলাল শশীর বিয়ে হয়ে যায় সাতপাকে বাঁধাপড়ে। শুভদৃষ্টি হয় শশীর মুখে ভাষা eনাই সে শুনতেও পায় না। শশীর চোখে অব্যক্ত অনেক কথা বুঝে নেয় দুলাল। আজ ভাসান নয়, .nনৈঃশব্দ্যের এক প্রতিমার বোধনের দিন। দুলাল শশীর হাত দু'টি ধরে। আস্থা আর বিশ্বাসের সে aহাত...। Banglasahity***** www.banglasahitya.net

বাস্তব ঘটনা গল্প সমর্পি তা দে রাহা www.banglasahitya.net

বাস্তব ঘটনা পৃষ্ঠা || 156 --- সমর্পিতা দে রাহা বাস্তব ঘটনা আচ্ছা মা তোমাদের কাছে একটা প্রশ্ন আছে । মা কটমট রেগে বলে সারাক্ষণ তোমার ভীষণ প্রশ্ন! লেখাপড়া তে মন দাও। মুনিয়া চিৎকার করে বলে যা বাবা। তোমরা তো সোম থেকে শনি বাড়িতে থাকো না। আমি তো একা একা পড়ি। মা বলে আমরা দুজনে চাকরি করি। আনন্দ করতে যায় না। মুনিয়া বলে আমি কোথায় বললাম তোমরা আনন্দ করতেযাও! বাবা বলে বসলেন মুনিয়া তুমি যত tবড় হচ্ছ মায়ের মুখে তর্ক করছ। মুনিয়া মুখটা কাঁচুমাচু করে নিজের ঘরের দিকে যেতে যায়। তখন eমা বলে কি বলবি বলে যা। নাহলে তোর পড়াতে মন বসবে না। মুনিয়া বলে বসে আমি যেটা বলব .nসেটা ভালো লাগবে না। শুনে মুনিয়ার বাবা বললেন তাহলে সেটা বলো না। মুনিয়া বলে বাবা না yaবলতে পারলে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। itমুনিয়ার মা বলে ঠিক আছে বলে যা। সারাদিন তো বকতেই থাকিস।ওই এক কান দিয়ে শুনব আরেক hকান দিয়ে বার করব। saমুনিয়া গজগজ করে রাগ করে বৃদ্ধাশ্রমে ফোন করে ঠাম্মার সাথে গল্প করে মনটা ঠান্ডা করে। ঠাম্মা laমুনিয়ার জন্য তিলের নাড়ু রেখেছে। বাবার সাথে গিয়ে নিয়ে আসতে বলেছে। gঠাম্মা কত কি বানাতে পারে!! nআর দিদা কিছু পারে না। পারে শুধু মাকে নালিশ করতে। অফিস থেকে আসতেই নালিশ।আরে মুনিয়া Baফাস্ট ইয়ারে পড়ে। ফোন করলেই দিদা বলবে কি রে ছেলে বন্ধুদের পাল্লায় পড়লি। এই নিয়ে মুনিয়া আর দিদা র বচসা শুরু হয়ে যায়। একদিন মুনিয়া কলেজের বন্ধু শান্তনুকে নিয়ে ঠাম্মার কাছে দেখা করে আসে। কদিন ধরে মন খারাপ করছিল। হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে ঠাম্মাকে অনেক খাবার কিনে দিয়ে আসে। ঠাম্মার কান্নাভেজা গলাটা পড়তে বসে মনে পড়তেই মুনিয়া কেঁদে ফেলে। খাবার টেবিলে মুনিয়া বলে কতদিন ঠাম্মাকে দেখতে যাও নি বাবা?? মা বলে বসে সোম থেকে শনি ব্যাঙ্কে কত কাজ থাকে বল। বাবা সময় পায় কোথায়! তাই তো আশ্রমে অনলাইনে টাকা পাঠানো হয়েছে। ঠিক আছে আমি কাল ছুটি নিয়েছি। দেখে আসব। বিকেলে দিদাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাব। মুনিয়া বলে ওঠে ও দিদার জন্য ছুটি নিয়েছ। কখনো তো ঠাম্মার জন্য ছুটি নিতে পারো!! www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 157 মুনিয়াকে মুনিয়ার মা বলে,তোকে কি তোর ঠাম্মা এই সব বুদ্ধি দেয়। মুনিয়া বলে ওঠে একমাস দিদা আরেক মাস ঠাম্মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখলে হয় না। সবাই চুপ। মুনিয়া বড় হয়ে গেছে। ভয়ংকর কথা বলতে শিখে গেছে। মুনিয়ার মা ঠান্ডা মাথায় বলে , এই বাড়িতে যে থাকি,এটা তোর দিদার বাড়ি। মুনিয়া বলে ওঠে ব্যাঙ্কে কাজ করো দুজনে।একটা বাড়ি বানাতে পারো নি বাবা!! তাই তোমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয়। মার মা টা মা হয়। বাবার মা টা মা হয় না! বাবা তোমার কষ্ট হয় না। মুনিয়ার বাবা খাবার না খেয়ে উঠে যায়। মুনিয়ার মা বলে সারাদিন পর তোর বাবা খেতে বসল,তোর সহ্য হলো না। বাবা একদিন না খেলে কিছু হবে না। কিন্তু ওই বুড়িটা রোজ চোখের জল ফেলে তাতে তোমার স্বামীর অকল্যান হচ্ছে। তুমি বুঝতে পারবে,যখন তোমার মুনিয়া বিদেশে পড়তে যাবে। tসারা বাড়ি নিশ্চুপ।মুনিয়ার দিদা বলে ওঠে মুনিয়া বড্ড বাচাল হয়েছিস। eমুনিয়া বলে তা তো বলবে দিদা,পরের ছেলেকে জামাই করে ছেলে বানিয়েছ।মেয়ে দিয়ে একটা .nছেলে ও একটা মেয়ে পেয়েছ।আর তোমার বেয়ান কি পেয়েছে বলতে পারো! aআসলে সমাজটা স্বার্থপর। সবাই নিজ স্বার্থ দেখে । ityহঠাৎ টেলিফোন আসে মুনিয়ার ঠাম্মা মারা গেছে। তৎক্ষণাৎ সবাই ওখানে যায়। hমুনিয়া চিৎকার করে ঠাম্মাকে জড়িয়ে বলে ঠিক আছে ঠাম্মা। তুমি চলে গিয়ে শান্তি পেয়েছ।রোজ aতিলে তিলে মৃত্যুর চেয়ে একেবারেই দাদুর কাছে চলে গিয়ে ভালো করেছ। Banglas***** www.banglasahitya.net

দেশমাতা ও দেশসেবকদের প্রণাম কবিতা রঞ্জনা গুহ www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 159 দেশমাতা ও দেশসেবকদের প্রণাম --- রঞ্জনা গুহ দেশমাতা ও দেশসেবকদের প্রণাম এই দেশের মাটি, জল ও শস্যে জুড়ায় আমার প্রাণ, মনে পড়ে মাতৃ আশ্রয়ে পেয়েছি এমনই আশ্বাসন, তাই জননীর সাথে জন্মভূমিকেও দিই সমান আসন; জন্মদাতৃ মা আর দেশমাতৃকার পদে জানাই নমন। tএকাত্মতা আর মিলনের মন্ত্রে হলে পরে দীক্ষিত, eভারতমাতার যোগ্য সন্তান বলে হবে সবে সম্মানিত, .nআজ দেশের বুকে দলাদলির রাজনীতি চলছে অবিরত; yaদেশের সন্তান সকল এভাবেই মা'কে করছে সদা বিব্রত। itকন্যা, জায়া, মাতা রূপে দেশমাতা আজ বিবিধ আঙ্গিকে, hকন্যা ভ্রুণ হত্যা কিংবা নারী ধর্ষণে রক্ত ঝরে মায়ের বুকে, saদেশের টাকা হচ্ছে পাচার দেশনেতাদের লোভের ঝোঁকে; laবিষে নীল হয়ে দেশমাতা আজ কাঁদছেন বিষম শোকে। gরক্ত রঞ্জিত আজ দেশমাতৃকার শত শত সন্তান, nনিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়ে মা'কে করে অপমান, Baজাতিতে জাতিতে কলুষিত হয় মায়ের সম্মান; দেশমাতৃকার কাছে এ দেশের সবাই একজাতি একপ্রাণ। তবু কিছু নিবেদিত প্রাণ আছেন দেশমাতৃকার রক্ষক, নত করে শির শুধু খেটে যান এ দেশের অবহেলিত কৃষক, ক্ষেতের বুকে সোনার ফসল ফলিয়েও তাঁরা নন ভক্ষক; সবার মুখেতে অন্ন তুলে দিয়েও চিরকাল তাঁরা ধনীর বাহক। এমনি কতো মহান আত্মা বাঁচিয়ে রেখেছে সভ্যতা সংস্কৃতি, হিমাঙ্কের নীচে সতর্ক সেনারাও ভোলে স্বার্থের অনুভূতি, তাই সবার প্রথমে জানাই তাঁদের সম্মান,জানাই প্রণতি, দেশমাতার রক্ষায় এঁদের দান স্বীকারে না ঘটে যেন বিচ্যুতি।। ***** www.banglasahitya.net

ভালো লাগার পরশ কবিতা মধুছন্দা গাঙ্গুলী www.banglasahitya.net

ভালো লাগার পরশ পৃষ্ঠা || 161 --- মধুছন্দা গাঙ্গুলী ভালো লাগার পরশ দিগন্তের ওই শেষ সীমানায় মনটা চলে ছুটে , বাঁধনহারা মনের চাওয়া সব খুশি নিই লুটে । খেয়াল বশে মন পরশের নীল সাগরে ভেসে , নীলকান্তের ঢেউয়ের দোলায় দুলছে ভালোবেসে । tব্যথার বাহন দুঃখগুলো সরাই দূরে-দূরে , eমন-কোটরে কষ্ট রাখি সান্ত্বনাতে মুড়ে । .nইচ্ছা বোঝাই ইচ্ছা-তরী ভাষাই অগাধ জলে, yaকিছু ইচ্ছা পার লাগে তো কিছু ভেসে চলে । itঅনুর্বর এই জীবনভূমি কঠিন ইঁটে ভরা , hমগজ লাঙ্গল বুদ্ধি সারে কাটবে ব্যাধি জরা । saভিড়ের মাঝে ঘুরে ঘুরে গোপন করি শোক , laমিথ্যা সুখের মাঝে একটি পূর্ণ সুখ হোক । gমন-সঞ্চয় শক্তিটুকু দুই জানুতে ঢেলে , nপ্রতিশ্রুতির দীর্ঘ বাহু উর্দ্ধে দিই মেলে । Baভালোলাগার পরশগুলো মণি মালার মতো , কণ্ঠে জড়াই,দূরে সরাই খারাপ লাগা যত। www.banglasahitya.net

মায়াজাল কবিতা সুদর্শ ন দত্ত www.banglasahitya.net

মায়াজাল পৃষ্ঠা || 163 --- সুদর্শন দত্ত মায়াজাল নির্জনে এই পথে একা একা হেঁটেই চলেছি, অমানিশার গভীর ছায়াতলে অন্ধকার, গহীন আঁধারে মোড়া পথ এরই নাম নাকি সংসার...!!! tআশেপাশে ডাইনে বাঁয়ে সঙ্গী সাথী অনেক পেলাম eসবটাই মেকি, ভুলে ভরা, .nস্বার্থরহিত কেউ নয়, কেউ ছিল না, yaপথের সন্ধান দিল অনেকে তবে হাত ধরে হাঁটল না কেউ itবন্ধু ভ্রাতা স্ত্রী পুত্র অনেক চরিত্র উঠে এলো hস্বার্থের সংঘাতে সকলেই বকধার্মিক...!!! lasaদীর্ঘ পথে মনে হয় সব পেয়েছি gপ্রথম জীবনে মা বাবা সে বড় আপন nএকে একে ভীড়ে গেল আত্মীয় স্বজন Baবন্ধু বান্ধব স্ত্রী পুত্র যেন হরিহর আত্মা মা বাবা চোখ বুজলে সবাই ভো কাট্টা সঙ্গী সাথী সকলেই দূর গ্রহের জীব পুত্র কন্যার বিয়ে হলে, ওঁ নমঃ শিব শিব! একমাত্র সঙ্গী হল স্বামী আর স্ত্রী বাদবাকী জীবনের সবটাই ফাঁকি ! গভীর নির্জন মনে বড় অসহায় বড় একা হেঁটেই চলেছি অমানিশার ছায়াতলে আমরা সংসারবদ্ধ জীব যেটুকু বাঁচি, সবটাই আবদ্ধ মায়াজালে ! ***** www.banglasahitya.net

সমকামী দম্পতির নৈতিক পদাবলী কবিতা উপেক্ষিৎ শর্মা www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 165 সমকামী দম্পতির নৈতিক পদাবলী --- উপেক্ষিৎ শর্মা সমকামী দম্পতির নৈতিক পদাবলী লেগে আছে অগোছালো কিছু কথার নমুনা, প্ল্যাটোনিক প্রেমের ঘর্মাক্ত আদিরস আর নোটবন্দী মৃত্তিকার অরগ্যানিক অনুশোচনা। এই ছিল গীতগোবিন্দের নবধারাপাত। থিয়েটার হলের অন্ধ সীটে বসে বাদামের কথোপনিষদ tচৌখুপি ফ্রেমের পশ্চিম দিগন্তে সাতরঙা হত্যাকাণ্ড। eগ্রীণরুমে শেষ দৃশ্যে আবহমানের ওকালতনামা। .nনায়িকার ভ্রূ-প্লাক করার অপেক্ষায় দ্বন্দ্বমূলক দর্শকের yaচুল ছেঁড়া বস্তুবাদ। সবটাই অনিচ্ছাধীন প্রত্যঙ্গের ড্রপসীন। itনদী স্রোতে ক্ষুব্ধ প্যাপিরাসে ফুটে ওঠে নন্দনতত্ত্বের আত্মজীবিনী। Banglasahযা এখন বিপননযোগ্য সমকামী দম্পতির নৈতিক পদাবলী। ***** www.banglasahitya.net

হোমওয়ার্কের টানাপড়েন গল্প উপেক্ষিৎ শর্মা www.banglasahitya.net

হোমওয়ার্কের টানাপড়েন পৃষ্ঠা || 167 --- উপেক্ষিৎ শর্মা হোমওয়ার্কের টানাপড়েন রাত দশটা। খিদেটা চাগিয়ে উঠেছে অনাথের। মেয়ে শিলু, মুখ গোঁজ করে স্কুলের পড়া নিয়ে ব্যস্ত। ওর গোমড়া মুখটার দিকে আড়াআড়ি তাকিয়ে অনাথ ভাবল, শিলু, আমার একমাত্র আদরের কন্যা, ওকে সঙ্গে না নিয়ে কি একা একা খেতে বসা যায়? দিনের বেলা হয় না, রাতে অন্তত মেয়েকে পাশে বসিয়ে স্নেহ কাতর অন্তরটায় সামান্য উষ্ণতা পেতে চায় ও। মেয়েই ওর প্রাণ। ডাইনিং টেবিলে tবসে মেয়ের সঙ্গে গল্পগুজব, হাসিঠাট্টা, রসিকতা করতে করতে খাওয়া আর মেয়ের স্বতঃস্ফুর্ত eপ্রাণময়তা অনুভব করা অনাথের অভ্যাস। জমাট বাঁধা দিনগুলোর দমবন্ধ আবহাওয়া থেকে একটু .nযেন শুদ্ধ বাতাসের প্রলেপ। তাই রোজকার মত আদরের হাঁক পাড়ে অনাথ, ya-খেতে এসো শিলু। স্টপ স্টাডি। it- আঃ! দাঁড়াও না বাপি, এই জ্যোমেট্রিটা করে নিই! একটু বিরোধিতার সুরে বেজে উঠল শিলু। h-হোমওয়ার্ক নিশ্চয়! রসিকতার ঠেস দিল অনাথ। sa-রোজ একই প্রশ্ন কর কেন বলত বাপি? দৃশ্যতই বিরক্ত শিলুর মৃদু ঝাঁঝাল উত্তর। অনাথের ফিচেল laহাসি উপেক্ষা করে আদুরে প্রতিপ্রশ্ন শিলুর, আচ্ছা বাপি, তোমাদের সময়ে স্কুলে হোমওয়ার্ক দিত? g-নিশ্চয় দিত। তবে হোমওয়ার্ক না, হোমটাস্ক। বাড়ি থেকে করে নিয়ে যেতে বলত। পারলে ভাল, না nপারলে ক্লাসে করে দিত, বুঝিয়ে দিত। Ba-ইস্‌! তোমাদের কি ভাল ছিল, না বাপি? আমাদের তো ঘুরেও দেখবে না। পরের চ্যাপ্টারে চলে যাবে। আর যারা করে নিয়ে যাবে না তাদের ওয়ার্ন করবে, গার্জেন কল করবে... -সে আর বলতে ! ওর’ম কত কলই তো অ্যাটেণ্ড করতে হয়েছে। ওফ্‌! কি ট্যাক্‌ট্যাক সব কথা। কান গরম হয়ে যায়। সামান্য সামান্য কারণে কম ধ্যাতানি খেতে হয়েছ...! নীনা, অনাথের স্ত্রী, কথাগুলো শেষ করতে না দিয়েই স্বভাব সুলভ ঢঙে ঝেঁজে উঠল, -অ্যাঁ! তুমি আবার কবে ওর জন্যে ধ্যাতানি খেলে? কদিন গেছো ওর স্কুলে? ওই সব টেঁটিয়া মিস্‌দের কবার মিট করেছ শুনি? উত্তাপের বাতাবরণটা প্রশমিত করার চেষ্টায় শিলু বলে উঠল, -বাপি তো চিরকালই একটু শান্ত, ভালোমানুষ টাইপের যাকে বলে। তাই না বাপি! হালকা ঠাট্টা আর সহানুভূতির সুর শিলুর গলায়। -ঐ জন্যই তো কিছু হলনা তোর বাপির। নিজস্ব তীক্ষ্ণ শ্লেষাত্মক স্বরে বলব নীনা। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 168 -কি আর হতে চাইছিলে ?‍ -কি আবার! যা সবাই চায়। একটু সুখ, একটু সাচ্ছন্দ। সে সব তো বাদই দিলাম, সংসারের প্রতি কর্তব্যটুকুও তো কর না। পাশের বাড়ির রবিনদাদের গিয়ে দেখে এসো......। কথার মোড় ঘুরিয়ে শিলু ঘর থেকে আদুরে গলায় বলে উঠল, -বাপি, আইসোসিলিস ট্র্যাঙ্গেলের ভার্টিক্যাল আঙ্গেলটা সিক্সটি ডিগ্রী হলে আদার টু আঙ্গেলসের ভ্যালু কত হবে? এভাবেই শিলু অনাথকে নীনার বাক্যবান থেকে উদ্ধার করল বলা যায়। স্বস্তি পেল অনাথ। একটু সামলে নিয়ে শিলুকে প্রতিপ্রশ্ন করল, -তুমি বল, কি হবে? -ধ্যাৎ! এই জন্যে তোমায় কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে না। পারছি না বলেই তো জিজ্ঞেস করছি,নাকি ? -কেন পারবেনা? একটু ভেবে দেখো । নিশ্চই পারবে। এটা তোমার জানা উচিত। -ম্যাথটা একদম মাথায় ঢোকে না। কেন বলো তো, বাপি? t-ঢুকবে, ঢুকবে। ঠিক ঢুকবে। আগে খেয়ে নিবি আয়। আসলে এখন তোর খাবার সময়, মানে বাড়ির eহোমওয়ার্কের সময়। এখন তুই যদি স্কুলের হোমওয়ার্ক নিয়ে ব্যস্ত থাকিস তাহলে তোর মধ্যে একটা .nকনফ্লিক্ট মানে টানাপড়েন চলবে। কোনটা আগে আর কোনটা পরে এটা তোর সিস্টেম একটা aস্পনটেনাশ ডিসিশন নিচ্ছে, আর তুই সেটাকে চাপা দিয়ে তোর নিজের বাহ্যিক মানে এক্সটার্নাল ityডিসিশনটা চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করছিস। ফলে কি হচ্ছে......... h-অত লেকচার দিতে হবেনা। ওর উত্তরটা তাড়াতাড়ি বলে দাও তো, হোমওয়ার্কটা করে নিক। কর্কশ aহুকুম নীনার। উপেক্ষা করল অনাথ। বলল, las-না, না। এখন খাওয়া। যে সময়ের যা। এখন ওকে উত্তরটা বলে দিলে ওর নিজের বুদ্ধিটা খাটাবে না। ফলে কি হবে, উত্তরটা জানা হবে কিন্তু আখেরে কোন লাভ হবে না। বরং তুই চলে আয় শিলু। (নীনার ngউদ্দেশে) খানা রেডি কর। শিলুকে আদুরে ডাক, কাম মাই বেবি। a-ওফ্‌! তুমি খাও না। ও একটু পরে নয় আসছে। নীনার এই শান্ত ও আপস মীমাংসার বিরলদৃষ্ট রূপ Bও স্বরের সৌজন্যে উৎসাহিত আনাথ বলে উঠল, -বাহ! তাই কখনও হয়! মেয়েকে ছাড়া আমায় কোনদিন রাত্রে একা একা খেতে দেখেছ? -ওঃ! দরদ একেবারে উথ্ল‌ ে উঠছে। -এই দেখ! এটাকে ‘দরদ’ বলে বিকৃত কোর না! এটা ত’ আমার কর্তব্য। খানিকটা দায়িত্বও। তুমি ত’ যখন তখন বল, আমি নাকি তোমাদের প্রতি কোন কর্তব্যই করি না। কিন্তু এটা ত’ আমার সন্তানের প্রতি দায়বদ্ধতা। ওকে নিয়ে খেতে বসা, ওর খাওয়া ঠিক মত হচ্ছে কি না দেখা...... -থাক, তোমায় অমন কর্তব্য না করলেও চলবে। ওর একেবারে এক্ষুণি না খেলে কিছু এসে যাবে না......, মাকে বাধা দিয়ে শিলু বলে উঠল, -না গো মা, সত্যিই খুব খিদে পেয়ে গেছে। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 169 -যাও, আর কি ? বাপের আদরে আদরে একেবারে মাথায় উঠছে মেয়েটা। এবার স্কুল থেকে গার্জেন কল করলে নিজে যাবে। ঘরে বসে বসে বুলি কপ্‌চান বেরিয়ে যাবে তখন, খাবার দিতে দিতেই গজগজ করছিল নীনা। আপসের স্বরে বলল অনাথ, -শোন, যে সময়ের যা। শিলু এমন কিছু সিরিয়াস ক্লাশে পড়ে না যে ওকে রাতদিন মুখ গুঁজে বই নিয়ে পড়ে থাকতে হবে! আর তাছাড়া... -হ্যাঃ ! তোমার মেয়ে তো সারাদিন বই নিয়ে বসে আছে ! -বই নিয়ে বসে থাকার সময়ই কোথায়? ভাব ত’ ওর সারাটা দিনের কথা। ওর সকাল বলে কিছু নেই। সকাল হতে না হতেই কোনরকমে নাকেমুখে গুঁজে স্কুলবাসের তাড়া। ওর বিকেল বলে কিছু নেই। স্কুল থেকে ফিরতে ফিরতেই সন্ধ্যে। বাড়ি ফিরেই আবার টিউসন পড়তে যাও। সেখান ঠেকে ফিরেই স্কুলের পড়া, তাও নিজের ইচ্ছেমত নয়, শুধুই হোমওয়ার্কের বোঝা আর টেনশন। -তা, পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা আবার কী করবে? -না না, তা করুক। কিন্তু দেখ, আগে ও মাঝেমধ্যে ‘মা, ভাল্লাগছেনা। একটু টিভি দেখবো?’ কিংবা t‘মা, ভীষণ টায়ার্ড লাগছে, একটু ব্রেক নিই ?’ বলে আবদার করত। তোমার চোখ রাঙানির চোটে eইদানিং তাও বলে না। খালি মুখ গুঁজে হোমওয়ার্ক করে। ওর তখনকার গোঁজ মুখটার দিকে .nভালোভাবে তাকিয়ে দেখেছ কোনদিন ? a-আমায় দেখতে হবে না। তোমার মত লোকের পাল্লায় পড়লে মেয়ের ভবিষ্যৎ আর দেখতে হবে না। ityএখনও ওর যা রেজাল্টগুলো পাচ্ছ, তোমার নিয়মে চললে সে সব তলানিতে গিয়ে ঠেকত, বুঝলে। h-আচ্ছা, এটা ত’ মানবে, প্রকৃতির একটা স্বাভাবিকতা আছে। তাকে উপেক্ষা করে তুমি যদি তার aওপর নিজের জোর ফলাতে যাও তাহলে তা কি সুস্থ ভাবে বিকশিত হতে পারব? তাতে কি হবে? ঐ lasবনসাই জাতীয় একটা কিছু হবে, দেখতে সুন্দর, দেখাতে সুন্দর, কিন্তু কাজে...... -ওফ্‌, বাপি! বনসাই-এর কথা বলতেই মনে পড়ে গেল। জান তো, আমার এক ক্লাশমেট, ngতরুলতাদের বাড়িতে কি দারুণ একটা বটগাছের বনসাই আছে গো! ওঃ! কি বিউটিফুল! a-বিউটিফুল? ও, কে। ফাইন। খুব ভাল। এবার বল ত’, বটগাছের কোনটা আমরা সবচেয়ে বেশি Bখুঁজি? -সে আবার কি? অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন শুনে অবাক হতচকিতের মত তাকিয়ে থাকে শিলু। প্রশ্নটা আরেকটু সহজ করার চেষ্টায় অনাথ বলে, -মানে, বটগাছ বলতেই আমরা তার সঙ্গে কোন্‌অনুসঙ্গটা মানে শব্দটা প্রথমেই যোগ করি? -তুমি কি যে বল না বাপি ঠিক বুঝতেই পারি না। -ধ্যাৎ, মেয়েটা! এটাও বলতে পারছিস না! বটগাছ বলতেই আমরা তার সঙ্গে ‘ছায়া’ শব্দটা ব্যবহার করি না? -হ্যাঁ...আঁ ! ঠিক বলেছ বাপি। আমরা বলি তো, বটগাছের ছায়া। কিন্তু তাতে কি হল? -তাহলে এবার বল, ঐ বনসাইটার সঙ্গে তুই এই ‘ছায়া’ শব্দটা ব্যবহারিক অর্থে প্রয়োগ করতে পারবি? www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 170 -ধুর ! ওর আবার ছায়া। ঐ তো এক হাত লিলিপুট গাছ, তাও টবে। তার আবার ছায়া! -তাহলে বোঝ, ওর স্বাভাবিক সত্তাটাই নিশ্চিহ্ন, তাই না? তবে আর ও কিসের বিউটিফুল? -খুব হয়েছে, এবার তোমার লেকচার থামাও। খেয়ে উদ্ধার কর। চেয়ারটা টেনে গুছিয়ে বসল অনাথ। শিলুকে পাশে বসিয়ে ওর খাওয়া দেখতে দেখতে খাওয়া সুরু করল। মেয়ের নিষ্পাপ, নির্মল উচ্ছল মুখের দিকে তাকিয়ে এই মুহূর্তে অনাথের মনে হল, এখন শিলুর মুখে কোন হোমওয়ার্কের টানাপড়েন নেই। ক্লাশে ফার্স্ট–সেকেণ্ড হবার নেই কোন টেনশন। ওর এই সরল নিষ্পাপ শিশুমুখই ত’ একজন পিতার আসল প্রাপ্তি, যা এখন প্রায় দুর্লভ হয়ে উঠছে। নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে তারিয়ে তারিয়ে প্রাণ ভরে এই আনন্দ উপভোগ করছিল অনাথ একজন প্রকৃত পিতার মত, কিন্তু...কিন্ত, ভাবল অনাথ, এতক্ষণ মেয়ের হয়ে নীনার সঙ্গে যে ওকালতিটা করল, সেটা কি মেয়ের ছেলেমানুষিপনাকে একটু বেশি প্রশ্রয় দেওয়া হল? এটা কি ওর tভবিষ্যৎ উন্নতির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারি যুক্তি হয়ে গেল? এই দ্রুতগামী আধুনিকতার সঙ্গে তাল eরেখে জীবন সগ্রামে প্রতিযোগিতার মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া শত্রুতা হয়ে গেল না ত’? ভাবতে ভাবতে .nনিজেই একটু কুঁকড়ে গেল অনাথ। ভাবল, নীনাই ঠিক। ভাবল, ওদের স্কুলই ঠিক। সর্বক্ষণ চাপে রাখ। aঠেলে দাও প্রতিযোগিতার মল্লভূমে। ইঁদুর দৌড়ে সামিল হয়ে যাক। যতটুকু ওদের মধ্যে থেকে বের ityকরে নেওয়া যায়, নিংড়ে বার করে নাও। নইলে যে পিছিয়ে পড়তে হবে! নইলে এই কঠিন hজীবনযুদ্ধে সরে যেতে হবে লড়াই থেকে। হয়ত ওরাই ঠিক। হয়ত স্কুলই ঠিক। তাই অনাথ খেতে aখেতেই নিজেকে শুধরে নেবার ঢঙে খানিকটা স্বগতোক্তির মত বলল, las-হ্যাঁ, লেখাপড়া ত’ করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ—এ ত’ মধুবাক্য। ngচিরকালীন। বলতে বলতে পাশে বসে থাকা শিলুর গ্রাসভর্তি মুখের দিকে তাকাল। শিলু মুখের খাবার aগলাধঃকরণ করার আগেই হঠাৎই যেন শরীর কাঁপিয়ে আধোউচ্চারণে অনাথের দিকে তাকিয়ে আর্ত Bস্বরে বলল, -বাপিই...... -কি মা ? -তুমি কিন্তু আমার অ্যানশারটা বলে দাওনি ! -কোনটা রে ? -ঐ যে, ট্র্যাঙ্গেলের...... শিউরে উঠল অনাথ। বুকটা ধক্‌ করে উঠল ওর। আবার, আবার শিলুর মুখটা কেমন কাঠ কাঠ চোয়াড়ে হয়ে উঠল। বাস্তবের কাঠিন্য আর পরিস্থিতির কানমোচড়ে ওর শিশুসারল্য এক নিমেষে উধাও। আবার সেই গোঁজ মুখ, সেই কুঞ্চিত ভ্রু, দোমড়ান চোয়াল। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 171 সেই হোমওয়ার্কের টানাপড়েন, মিস্‌দের গার্জেন কলের টেনশন, হয়ত ক্লাশে র‍্যাঙ্ক নেমে যাবার অনিশ্চয়তা, এসব ভাবতে ভাবতে, অনাথ, পাশে বসে থাকা নিষ্পাপ কিশোরী মুখের দিকে অস্থির নিঃশ্বাসে তাকিয়ে মনে মনে ভাবল, এই ত’ অগ্রগতির মূল্যায়নের প্রতীক। হোমওয়ার্কের হাত ধরে, টেনশনে, শত টানাপড়েনের মধ্যেও.... -তখন থেকে বলছি, ওর অ্যানশারটা বলে দাও, তা না, বাবু জ্ঞান দিচ্ছেন! খিঁচিয়ে উঠল নীনা। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে অনাথ নীনার যে কথাটাতে প্রচণ্ড আহত হল তা হচ্ছে, ‘বাবু জ্ঞান দিচ্ছেন’। কথাটা ওর কাছে অবজ্ঞাবহ এবং অবমাননাকরও। উত্তেজিত হয়ে চড়া স্বরে বলল, -হ্যাঁ, জ্ঞান দিচ্ছি। জ্ঞান আছে তাই জ্ঞান দিচ্ছি। তোমার মত আকাট হলে... -দেখলি, দেখলি শিলু, কির’ম বেআক্কেলে ইডিয়েটের মত কথা..., আরও কীসব বলতে যাচ্ছিল নীনা। মাকে থামিয়ে গর্জে উঠল শিলু, -স্টপ্‌, স্টপ্‌মম। উথলে ওঠা কান্নার ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় আটকে যাওয়া কথাগুলো শেষ না tকরেই উঠে দাঁড়াল শিলু। উঠে বেসিনে হাত ধুয়ে দ্রুত গতিতে পড়ার ঘরে ঢুকে ধড়াম করে দরজা eবন্ধ করে দিল। .nহতচকিত অনাথ আর নীনা বিমূঢ় নিশ্চল পলকহীন। দরজা বন্ধের ‘ধড়াম’ শব্দটা ওদের দুজনেরই aবুকের মধ্যে যেন ভয় আর আতঙ্কের অগ্নিক্ষরণের উৎস। দরজা বন্ধ করার “ধড়াম” শব্দটাও যে এত ityভয়াবহ সংকেত বহন করে তা অনন্ত আর নীনা পরস্পরের চোখে চোখ রেখে ঠাহর করে ওঠার hচেষ্টায় ব্যাপৃত হল... Banglasa***** www.banglasahitya.net

দময়ন্তী কবিতা চিন্ময় ব্যানার্জী www.banglasahitya.net

দময়ন্তী পৃষ্ঠা || 173 --- চিন্ময় ব্যানার্জী দময়ন্তী বিদর্ভ দেশের রাজা , ভীম মহামতি, রাজহংস উপনীত , নলের নিকট , দময়ন্তী নামে কন্যা আছিল তাহার। দময়ন্তীর বার্তা সব , তাঁহারে কহিল। অসামান্যা নিরুপমা , অতি গুণবতী, এত শুনি নল রাজা , চালায়ে শকট, করিলেন আয়োজন, স্বয়ম্বর সভার। বিদর্ভ দেশের দিকে , গমন করিল। etস্বয়ম্বর সভার কথা , রটে চারিদিকে, স্বয়ম্বর সভা তরে , বিদর্ভ দেশেতে , .nশুনিলেন দিকে দিকে , কত গুণীজন। ইন্দ্রাদি দেবতাগণ , বাহনে চড়িয়া। yaবরমাল্য পাইতে তাঁরা ,দময়ন্তী করে, itসভায় আসিতে করে , নানা আয়োজন। চলিলেন দ্রুতবেগে , কন্যায় জিনিতে, sahনলরজা সর্বোত্তম, নর রূপে গুণে, পথিমধ্যে নল সনে , তাঁহাদের দেখা। laদূতমুখে দময়ন্তী , শুনিলেন ইহা। gতাই তিনি মনে মনে ,তাঁহারই প্রেমে, সাষ্টাঙ্গে প্রণমি রাজা ,সব দেবতারে , Banদিবারাত্র মগ্ন র' ন, ব্যাকুলিত হিয়া। কহিলেন করযোড়ে , \" সেবিবো কেমনে ? \" ইন্দ্র কহিলেন তাঁরে, \"দময়ন্তী তরে, বরমাল্য জিনিতে মোরা , চলেছি সেখানে।\" দময়ন্তী একদিন , সখীদের সনে , তুমি যাও দূতরূপে , আমাদের তরে , অন্তঃপুর উদ্যানেতে, আছেন বসিয়া। বলিও কন্যারে তোমা , পাঠায়েছি মোরা । উড়ে এলো রাজহংস, ঠিক সেই ক্ষণে, দময়ন্তী যেন কোন ,এক দেবতারে , পলকের তরে তাঁরে , ফেলেন ধরিয়া। পতিত্বে বরণ করে ,বরমাল্য দ্বারা। রাজহংস বলে তাঁরে , \"ছেড়ে দিন মোরে, দেবতার বরে নল , ছদ্মবেশ ধরে , নল সনে আপনার , ঘটাবো মিলন ।\" প্রবেশিয়া অন্তঃপুরে , দময়ন্তী সনে। ইহা শুনি দময়ন্তী , ক্রোড় হতে তারে, কহিলেন সব কথা , তাঁহার সমীপে , উড়ায়ে দিলেন হয়ে , হরষিত মন । কন্যা কহে তাঁর কথা , দূত সন্নিধানে। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 174 দময়ন্তী কন তাঁরে , \" তনু প্রাণে মনে, পুষ্কর নামতে ছিল ,ভ্রাতা এক তাঁর, নলরাজে স্বামীরূপে ,করেছি বরণ। পাশা খেলা ছিল তার, প্রিয় অতিশয়। আমার এ বরমাল্য , অন্যেরে কেমনে, সুকৌশলে কলি করে, প্রভাব বিস্তার, বলে দাও ওহে দূত,করিব অর্পণ ? \" পরিণামে পাশা খেলা , ভা'য়ে ভা'য়ে হয়। ইহা শুনি নিজরূপ , ধারণ করিয়া , নলরাজা প্রতিবারে , পুষ্করের সনে , পরিচয় দিয়া তিনি ,হন অন্তর্হিত। পণ রাখি পরাজিত , হইলো খেলায়। নলরাজে এইরূপে , সম্মুখে হেরিয়া, রাজ্য ও ধনসম্পদ , হারাইয়া বনে , যার পর নাই তিনি ,হইলেন প্রীত। দময়ন্তী সনে রাজা , যাইলো তথায়। স্বয়ম্বর সভামাঝে ,প্রতি দণ্ডে পলে, ছলনা করিয়া কলি , স্বর্ণপক্ষী রূপে, খুঁজে ফিরে নলরাজে, উৎসুক নয়নে। একস্থানে বসে থাকে , অনড় হইয়া। নল ভাবিলেন মনে , ধরিতে পারিলে, tসহসা দেখেন কন্যা ,পাঁচজন নলে, eবিরাজিছে সভামঝে , বসি একস্থানে। অর্থলাভ হবে ' খন ,বিক্রয় করিয়া। a.nছলনা করিয়া তাঁরে ,দেবগণ সেথা, ityসভামাঝে আছে বসে , নলের বেশেতে। এত ভাবি মনে মনে , নিজ বস্ত্রদ্বারা, hসন্তোষিতে দেবগণে ,দময়ন্তী তথা, ধরিতে গেলেন রাজা , স্বর্ণ পক্ষীটিরে। aস্তবস্তুতি পাঠে করে , সঙ্কট নাশিতে। কিন্তু যেই নিজবস্ত্র , দিলেন চাপিয়া , lasসহসা হেরিল বালা ,চারজন নলে, উড়িয়া পালালো পক্ষী , লয়ে বস্ত্রটিরে। ngছায়া পড়ে নাই ভূমে , কি কারণে তাহা। aশুনেছিল লোকমুখে ,কোনো এক কালে, দময়ন্তীর বস্ত্রখানি , সম্বল এখন , Bভূতলে পড়ে না কভু ,দেবতার ছায়া। উভে পরিধান করে , এক এক প্রান্ত। পরিশ্রান্তা দময়ন্তী , নিদ্রায় যখন , নলরাজা গেল চলি , কাটি অর্দ্ধাংশ। তখন চিনিলো নলে ,অতি অনায়াসে, দময়ন্তী দেখিলেন ,নল নাই কাছে, কন্ঠে তাঁর বরমাল্য , করিল অর্পণ। পতি অদর্শনে সতী,পাগলিনী প্রায়। জড়াইলো পরস্পরে ,দুই বাহুপাশে , বনে বনে অন্বেষণ , করিয়া স্বামীরে, জয়ধ্বনি দিয়ে সভা, হলো সমাপন। বিফল হইয়া ফেরে, সারা বনময়। এ হেন সংবাদ শুনি ,কলি ও দ্বাপর, অন্বেষণকালে সতী, এলেন একদা, প্রবৃত্ত হলেন তাঁরা ,অনিষ্ট সাধনে। চেদিরাজ প্রাসাদের ,সমীপে যখন। নল ' পরে ক্রুদ্ধ হয়ে , শরীরে তাঁহার, চেদিরাজমাতা তাঁরে, আশ্রয় দানিয়া, বাসা বাঁধি রহিলেন , প্রতি ক্ষণে ক্ষণে । পতিরে আনিয়া দিতে ,করিলেন পণ। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 175 ও দিকেতে নলরাজা, ঘুরে বনে বনে, দেহের বর্ণনা আর ,গুণের বিচারে, দেখিলেন দাবানলে , প্রকাণ্ড সর্পেরে। দময়ন্তী ভাবিলেন ,বাহুকেরে নল । বেষ্টিত হয়েছে সেথা, মরে বুঝি প্রাণে, সন্দেহভঞ্জনে তিনি , কহেন পিতারে, জীবন বিপন্ন করি,রক্ষিলেন তারে। পুনরায় স্বয়ম্বরের , করুন কৌশল। কিন্তু ক্রূর সর্প দংশে, মহারাজ নলে, দময়ন্তীর পরামর্শে , বিদর্ভের রাজা, দেহের বিকৃতি তাঁর ঘটিল ইহাতে । ঋতুপর্ণ সনে বার্তা, করেন প্রেরণ। ভাবিলেন তিনি আত্ম, গোপনের কালে , সুবিধা অনেক হবে, নিজেরে লুকাতে । আগামী প্রভাতে কন্যা ,হবে স্বয়ম্বরা, অতএব তিনি যেন,উপনীত হন। নিজ পরিচয় নল ,গোপন করিয়া, নল যবে বার্তাখানি,শুনিলেন কানে, বাহুক নামেতে তার,নিলো পরিচয়। ভাবে মনে দময়ন্তী, করিবে না ইহা। স্বামী ছাড়া এ জীবনে ,কিছু নাহি জানে, tরথের সারথি পদে , তাহারে বরিয়া, সতী সাধ্বী পত্নী তার,স্বামী যার হিয়া। eঋতুপর্ণ রাজা তাঁরে ,দিলেন আশ্রয়। a.nইহা শুনি ব্যাকুলিত , বিদর্ভ রাজা, ঋতুপর্ণ মনে মনে ,বিদর্ভ কন্যায়, ityজামাতা দুহিতা তরে , করি অন্বেষণ। পেতে চান পত্নীরূপে,নিয়ত তাঁহারে। hঅবশেষে শুনিলেন,চেদিরাজ মাতা, তাই এই আমন্ত্রণে ,যাইতে তথায়, aরেখেছে কন্যারে তাঁর ,করিয়া যতন। বিলম্ব না করে রাজা , ক্ষনিকের তরে। lasদুহিতারে আনিলেন ,নিজ গৃহমাঝে, ngপিতৃগৃহে দময়ন্তীর, মনে নাহি সুখ। মনেতে উৎকণ্ঠা তাঁর ,এত ত্বরা করি, aনিয়ত স্বামীর চিন্তা, হৃদয়ে বিরাজে, কিভাবে সময়কালে ,পঁহুছিবে তথা। Bঅশ্রু বারি পড়ে ঝরে,ফাটে তার বুক। বাহুক কহিল তাঁরে , আমি ইহা পারি, অতএব মহারাজা ,ভাবেন না বৃথা। ইহা হেরি মহারাজা, অস্থির হইয়া, পৌঁছে সেথা বোঝে রাজা ,এসব ছলনা, জামাতারে অন্বেষণ,করিবার তরে। স্বয়ম্বর সভার কথা ,কেবল কৌশল। নানাদিকে জনে জনে , দূত পাঠাইয়া, দময়ন্তী ভাবে দ্রুত , রথের চালনা, মনে ভাবিলেন তারে,অনিবেন ঘরে। অন্য কেহ নাহি পারে ,পারে শুধু নল। দূত আসি কহিলেন , বাহুক নামেতে, অতঃপর ভীমরাজা , করেন বর্ণনা, ঋতুপর্ণের সারথি এক ,থাকে অযোধ্যায়। ঋতুপর্ণ রাজাসনে ,সকল বারতা। রূপেগুণে মহারাজা,নলের স্বভাবে, শুনি রাজা হৃষ্টচিত্তে ,করেন কামনা, ছদ্মবেশী নল বুঝি, বিরাজে তথায়। চিরসুখী হয় যেন ,তোমার দুহিতা। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 176 এইরূপে দময়ন্তী ,পাইলো পতিরে, টপ্ টপ্ করি ঝরে ,নয়নের জল । উভয়ে জড়িয়ে ধরে , উভে পরস্পরে, আবার পূর্বের রূপ ,ফিরে পেল নল। এদিকে দ্বাপর কলি ,নলেরে ছাড়িল, সন্তুষ্ট হইলো তারা ,দময়ন্তী গুনে। পুনরায় ভা ' য়ে ভা ' য়ে, দ্যুতক্রীড়া হলো, হারিল পুষ্কর এবে ,প্রতি দানে দানে । হারানো সকল কিছু ,পাইলো ফিরিয়া , সতী সাধ্বী দময়ন্তীর ,পতিভক্তি গুণে। tপুনরায় সিংহাসনে ,বসে নলরাজা, eঅপূর্ব এ কাহিনী আজো ,অমর ভূবনে। Banglasahitya.n***** www.banglasahitya.net

শুভেচ্ছা কবিতা মৃন্ময় সমাদ্দার www.banglasahitya.net

শুভেচ্ছা পৃষ্ঠা || 178 --- মৃন্ময় সমাদ্দার শুভেচ্ছা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই সবারে ধর্মহীন সংসার গড়ে উঠুক এবারে। সবাই থাকুক আনন্দে ঘিরে রোগজীর্ণ পৃথিবী সরে যাক দূরে। tসবাই থাকুক মিলেমিশে eনা থাকুক দ্বেষ হিংসে। .nখোলা মনে মিলুক সবাই। yaশিশুরা খেলুক নিজের মনেই। itভালোবাসায় ভরা থাক পৃথিবীর সব প্রান্ত hজঙ্গলরাজ বন্ধ হোক দিইনা কেন ক্ষান্ত? saজনজীবন ভরে থাক সুখে আর শান্তিতে। laধনাগম হোক সবার গৃহ থেকে গৃহতে। gনতুন বছর নতুন আশা nনতুন করে জীবনের ভাষা। Baবলুক সবাই নিজের কথা বন্ধ হোক কটু কথা। মিথ্যা ভাষণ হোক বন্ধ। কপট আচরন হোক বন্ধ। ধর্ষক যেন হয় শান্ত। সবাই যেন থাকে মত্ত। ***** www.banglasahitya.net

বেড়ানোর আনন্দ গল্প মৃন্ময় সমাদ্দার www.banglasahitya.net

বেড়ানোর আনন্দ পৃষ্ঠা || 180 --- মৃন্ময় সমাদ্দার বেড়ানোর আনন্দ এই চলো না কোথাও ঘুরে আসি। কোথায় যাবে বল? কালকের এই ছুটির দিনে ঘরে থাকতে মন চাইছে না যে কোন জায়গায় চলো না গো। আরে আমিও তো যেতে চাইছি। কিন্তু কোথায় যাবে সেটা তো বলবে? তুমি ঠিক করো সেটা। etস্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আলোচনা চলছে। কেউই ঘরে থাকতে চাইছে না। আসলে গত বছর দুয়েক ধরে .nলাগাতার ঘরে থাকতে থাকতে সবাই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাই এই বাঁধনটা একটু ঢিলে হতেই yaকাছেপিঠে কোথাও যাবার ইচ্ছা। itস্বামী চলো তাহলে ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছি পরের দিন শনিবার আছে। অফিসে ছুটি থাকবে। শুক্র শনি hঘুরে রবিবার রাতে বাড়ি ফিরে আসবো। saস্ত্রী কি মজা কি মজা!! খুব আনন্দ করবো কিন্তু বলে দিলাম। কিন্তু যাবেটা কোথায় কিছু কি ঠিক laকরেছ? gস্বামী চলো বকখালি ঘুরে আসি। কাছাকাছি সমুদ্রের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আসি। nস্ত্রী ওহ কি আনন্দ হচ্ছে? কতদিন পরে ঘর থেকে বেরোতে পারব। কিভাবে যাবে শুনি? Baস্বামী কাল ভোর ভোর বেরিয়ে পড়বো। এখান থেকে শিয়ালদা চলে যাব। শিয়ালদা থেকে নামখানা লোকাল ধরে নামখানা চলে যাব। ওখান থেকে ভ্যান রিক্সা করে হাতানিয়া দোয়ানিয়া নদীর পাড়। তারপর ভেসেলে করে ওপারে চলে যাব। ওপার থেকে সরাসরি বকখালি গাড়ি নিয়ে চলে যাব। এখন তো আবার বাসেও যাওয়া যায় ধর্মতলা থেকে সরাসরি বকখালি। দেখছি যেটা সুবিধা হবে তাই করবো। আমি এদিকে হোটেল বুক করে নিচ্ছি। স্ত্রী ঠিক আছে বুক করিয়ে নাও। এই শোনো আমরা কটায় বেরোবে। আর অত ভরে কি স্নান করে বেরোতে হবে? স্বামী দেখছি ট্রেন বাসের সময় দেখে বলছি। আর স্নান করবে কেন? ওখানে গিয়েই তো সমুদ্র স্নান করবে। পরদিন শুক্রবার ভোরবেলা দুজনে বেরিয়ে পড়লেন বকখালির উদ্দেশ্যে। গতকালই অনলাইনে হোটেল বুকিং হয়ে গেছিল। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 181 ওনারা সরাসরি চলে গেলেন ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে গিয়ে টিকিট কেটে উঠে পড়লেন বাসে। নির্দিষ্ট সময় বাস চলতে শুরু করল। মোটামুটি ঘন্টা দেড় দুই চলবার পর চা খাওয়ার জন্য একটা জায়গায় বাস দাঁড়ালো। স্বামী নিচে এসে চা নিয়ে স্ত্রীকে দিলেন। দুজনেই তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন এই জার্নি। সবাইকে তুলে নিয়ে বাস আবার চলতে শুরু করল। ধীরে ধীরে বাস হাতানিয়া দোয়ানিয়া ব্রিজ পার করলো। ওনারা অবশেষে বকখালি বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছালেন। ওখান থেকে একটা রিক্সা নিয়ে ওনারা পৌঁছালেন ওনাদের নির্ধারিত হোটেলে। সকাল দশটা নাগাদ হোটেলে পৌঁছে একটু খাওয়া দাওয়া করে নিয়ে ছুট দিলেন সমুদ্রস্নানে। জলে নামতে প্রথমে একটু ভয় করলেও কিছুক্ষণ পর ভয় কেটে গেলেই জল নিয়ে ওনারা হুটোপুটি করতে লাগলেন। এইভাবে যে কখন ঘন্টাদুয়েক কেটে গেছে কারোরই কোন হুশ নেই। শুধু জলকেলি করে যাচ্ছেন ওনারা। জল থেকে যখন উঠলেন তখন একটা বেজে গেছে। কোন রকমে গা হাত পা মুছে ওনারা চলে এলেন হোটেলে। সেখানে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে tআড়াইটে তিনটার দিকে বেরিয়ে গেলেন ফ্রেজারগঞ্জের উদ্দেশ্যে। সেখানে ফ্রেজার সাহেবের ভাঙ্গা eবাংলা দেখলেন। হৈ হুল্লোড় করতে করতে ছবিও তুললেন।একটা বন্ধনহীন অনুভূতি কাজ করছে .nওনাদের মধ্যে। সন্ধ্যার মুখে ওনারা ফ্রেজারগঞ্জ থেকে ফিরে এলেন হোটেলে। সেদিন আর কোথাও aবেরোলেন না। hityহোটেলে রাতের ডিনার খেয়ে শুয়ে পড়লেন পরেরদিনের ঘুরে বেড়াবার উদ্দেশ্যে। পরের দিন aসকালে উঠেই ওনারা রওনা দিলেন জম্বুদ্বীপের উদ্দেশ্যে। স্বামী স্ত্রীকে বললেন \" জানো এখন যেখানে lasযাচ্ছি বছরের একটা সময় পুরোটাই জলের নিচে থাকে। যে কারনে এখানে কোন লোক বসতি নেই। তবে ওখানে টাকাপয়সা কিন্তু খুব সাবধানে রাখবে। চুরি-ছিনতাই কিন্তু হামেশাই হয়। \" অবশেষে ngপৌঁছালেন ওনারা জম্বুদ্বীপে।কি অপরূপ নৈসর্গিক দৃশ্য। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। পথে ফুটে আছে aনাম-না-জানা কত রকমের ফুল। হৈহৈ করতে করতে ওনারা দ্বীপে নামলেন। দ্বীপে নেমে একটা Bজায়গা দেখে বসে সাথে আনা খাবার খেয়ে নিলেন। তারপর পুরো দ্বীপটা হাতে হাত ধরে হেঁটে বেড়াতে লাগলেন একেবারে মুক্ত বিহঙ্গের মত। ওনাদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন মধুচন্দ্রিমার যুগল। চারিদিক ঘুরে বেরিয়ে ওনারা আবার জেটিতে ফিরে এলেন। আর হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। সেদিন আর ওনাদের সমুদ্রস্নান করা হলো না। সোজা হোটেলে ফিরে স্নান খাওয়া করে নিলেন। একটু রেস্ট নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লেন হেনরি আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে। হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা ত্রিচক্রযান ভাড়া করলেন ওনারা। ত্রিচক্রযান করে যাবার সময় পথে পড়ল পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন বিভাগের হোটেল। অনেকটা এবড়ো খেবড়ো পথ পেরিয়ে এসে একটা জায়গায় থামল ত্রিচক্রযান। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 182 ওখান থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে আইল্যান্ডে। পায়ের চাপে বালিয়াড়ির বালি একটু একটু করে সরে যাচ্ছে। ওনারা এগিয়ে চললেন হেনরি আইল্যান্ডের দিকে। যত এগিয়ে চলছেন ততই একটা জলোচ্ছাসের শব্দ ওনাদের কানে ভেসে আসতে লাগলো। আইল্যান্ড যত কাছে আসছে শব্দ ততো তীব্র হচ্ছে। অবশেষে ওনারা হেনরি আইল্যান্ডে পৌঁছালেন। বকখালির সমুদ্র যেখানে একদম শান্ত সেখানে হেনরি আইল্যান্ডে তীব্র জলোচ্ছ্বাস। এখানে কিছুক্ষণ থেকে ওনারা আবার একটু এগিয়ে গেলেন বিশালাক্ষী মন্দিরের দিকে। জায়গাটা খুব বেশি পরিচিত না হলেও সবুজে ঘেরা জায়গা। একটা অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করছে মন্দিরের চারপাশে। এদিককার মতো ওখানে পুজোর ডালির কোন দোকান নেই। তাই আর পুজো দিতে পারলেন না ওনারা। বেশ কিছু সময় কাটিয়ে ওনারা আবার ফিরে এলেন হেনরি আইল্যান্ডে। ততক্ষনে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে ঢলতে শুরু করেছে। সমুদ্রের পাড় থেকে সূর্যাস্ত দেখবার অনুভূতি আলাদা। ওনারা হেনরি আইল্যান্ড দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখলেন। etকি অপরূপ সেই দৃশ্য। সূর্যাস্ত দেখবার পর ওনারা আবার সেই রাস্তায় ফিরে এলেন যেখানে ওনারা .nত্রিচক্রযান থেকে নেমেছিলেন। সেখান থেকে ওনারা ফিরে এলেন হোটেলে। পরেরদিন ওনারা aবেরিয়ে এলেন হোটেল ছেড়ে। ভারতবর্ষের গুটিকতক কুমির প্রজনন ক্ষেত্রের একটি বকখালিতে ityআছে। সেই কুমির প্রজনন ক্ষেত্র দেখতে বেরিয়ে গেলেন ওনারা। কুমির যা কিনা এতদিন ছবিতেই hদেখে এসেছেন আজ তা চাক্ষুষ করলেন। বেশ কিছুটা সময় কুমিরদের সাথে ব্যয় করে ওনারা aবেরিয়ে এলেন ওখান থেকে। ওখান থেকে বেরিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আবার বাসে চেপে বসলেন lasকলকাতার উদ্দেশ্যে। হয়তো এক দু দিনের ছোট ঘোরাফেরা ছিল কিন্তু যে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ওনারা Bangপ্রাণ ভরে নিয়ে এলেন তা বেশ কিছুদিন বেঁচে থাকবার রসদ যোগাবার পক্ষে যথেষ্ট। ***** www.banglasahitya.net

অধরা ভালোবাসা কবিতা ঝর্ণা দাস www.banglasahitya.net

অধরা ভালোবাসা পৃষ্ঠা || 184 --- ঝর্ণা দাস অধরা ভালোবাসা মাত্র কয়েক ফোঁটা নয়... অশ্রুনদী বয়ে গেছে, তরু ভালোবাসা এসে ধরা দেয়নি সারাজীবন অধরাই থেকে গেল! tকত নকল অশ্রু,অশ্রুবিহীন আঁখি পেয়েছে তার ঈপ্সিত ভালোবাসা। eভালোবাসা ! সে তো ঈশ্বর প্রদত্ত আশির্বাদ যার যোগ্যতা অর্জন সবাই করে না। .nতাই ভাগ্য লিখনের সময় ঈশ্বর সবার জন্য ভালোবাসা লিখে দেন না। yaঅশ্রুবারিধারা ঝড়িয়ে ফেলুক বা মরুভূমিতে মরুদ্যান তৈরী করে ফেলুক, itভালোবাসা কোনো গলি দিয়ে উঁকি দিতেও আসবে না, hযেমন পর্বতের শিখর থেকে ঝর্ণার জল কঠিন পাথরে আছড়ে পড়েও পাথরকে গলাতে পারে না,সে Banglasaনিজে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে নদীতে আশ্রয় নেয়, আর অজানায় পাড়ি দেয় ভালোবাসা খুঁজে নিতে....! ***** www.banglasahitya.net

ভালোবাসার আলো গল্প সাবিত্রী দাস www.banglasahitya.net

ভালোবাসার আলো পৃষ্ঠা || 186 --- সাবিত্রী দাস ভালোবাসার আলো ঝোলা কাঁধে মানুষটাকে বাসরাস্তার দিকে চলে যেতে দেখে চিৎকার করে ডাকতে গেল শিখা, গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোলো না কিছুতেই , কেমন একটা চিঁচিঁ শব্দ ! ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দুপুর থেকে কেবল ঘর-বার করেছে, সঙ্গে দুশ্চিন্তা থেকে থেকে মনটা কেবলই কু গেয়েছে-'কিছু tহলো না তো, এত দেরি কেন হচ্ছে, এমন তো হয়না! ' eক্লান্ত হয়ে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসেছিল, ঝিমুনি এসে চোখ লেগে গেছিল ,আর তার মধ্যেই .nএইরকম স্বপ্ন। উদ্বেগে অস্থির হয়ে কেবলই ঘর বার করেছে শিখা। কেন যে মরতে একা যেতে দিলো yaমানুষটাকে! একদণ্ড স্থির হয়ে বসতে পর্যন্ত পারে নি। hitতিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছে শিখা। না হলে মানুষটাকে একা ছাড়ত না কিছুতেই। মাসে একবার হলেও saশহরে যেতে হয় পেনশনের টাকা তুলতে আর প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধপত্রও নিয়ে চলে আসে তখনই। laশিখা সেসময় সঙ্গেই থাকে তার। ngপাহাড়তলির এদিকটায় জনবসতি খুব একটা নেই, ফাঁকা ফাঁকা কিছু ঘর, একটার পর একটা পাথর Baসাজিয়ে দেয়াল আর তার উপর ডালপালা দিয়ে লতাপাতার ছাওয়া। কিন্তু বড়ো মনোরম আর শান্ত পরিবেশে মনের সব জ্বালা জুড়িয়ে জল! চারদিক কোমল পেলব, সবুজ মখমলে মোড়া। খানিক দূরে একটা ঝরণা, স্বচ্ছ জলের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় পৃথিবীর যত দুঃখ বেদনা শোক। এখানে এই ঝর্ণাধারার পাশে দাঁড়িয়ে একদিন শিখা বলেছিল -\"ভাসিয়ে দিলাম দুখের পশরা নির্ঝরিণীর স্রোতে ।\" কলেজের পড়া শেষ হবার আগেই আচমকা হৃৎপিন্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে চলে গেলেন বাবা। শিখার জীবনের সব দরজাও বুঝি বন্ধ হয়ে গেল সেদিন। একটা পুরানো সেলাই মেশিন ঘরেই ছিল,সেলাইয়ের কাজ আর বাচ্চাদের পড়ানো, এর উপরেই ভাই আর মায়ের দায়িত্বে অবিচল থেকেছে বরাবর। নিজের কথা ভাববার অবসর মেলেনি তার। মাও চলে গেলেন একসময়। ভাইও ব্যস্ত তার সংসার নিয়ে, শিখাও ব্যস্ত থেকে গেছে আগের জীবনেই । বুকের ভেতরটা শুধু ফাঁকা ঠেকতো সবসময় । www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 187 শিখা ব্যাঙ্কে গেছিলো ভাইঝির স্কুলের বেতন জমা করতে। সেখানেই পরিচয় তপনবাবুর সঙ্গে। সে পরিচয় একদিন ভালোবাসায় পরিণত হলো,দুজনেরই একে অপরকে ছেড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হলো। তখন শিখা সাতচল্লিশ আর তপনবাবুর বাষট্টি। শিখা অবিবাহিত হলেও তপনবাবুর ভরা সংসার। তপনবাবু শিখাকে আঁকড়ে ধরতে চাইলেও শিখা সেদিন রাজি হতে পারে নি, তপনবাবুর সম্মান ক্ষুন্ন হবার কথা ভেবেই। বুকে পাথর বেঁধে তপনবাবুকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। কষ্ট কী কিছু কম হয়েছিল তার! আর আজ! সেই তো তার সঙ্গেই রয়ে গেল শেষ পর্যন্ত। জীবনের গতি বড়ো বিচিত্র। কার জীবনে কখন যে কী ঘটবে বলা মুশকিল! এ বোধহয় অমোঘ নিয়তির নির্দেশ ,নাহলে শিখার পক্ষে এ জীবন যাপন তো কল্পনাতীত ছিল। আপনমনে ঠাকুমা বলতেন-\" সেই যদি পায়ের মল খসালি, তবে কেন লোক হাসালি! \" শেষ পর্যন্ত তাই তো হলো। বড়ো একা লাগতো তার! বড়ো ভয়ানক এই নিঃসঙ্গতা ! একটা হতাশা ক্রমশ গ্রাস করে ফেলছিল। এরকম একটা সময়েই তার দেখা হয়েছিল তপনবাবুর সঙ্গে। তারপর একটু একটু tকরে ভালোলাগায়, ভালোবাসায় জড়িয়ে গেছিলো শিখা। জীবনের প্রথম প্রেম! মনে তার জোয়ার eএসেছিল। আশ্চর্য একটা অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে গেছিল সমস্ত সত্তা । সম্বিৎ ফিরলো যেদিন, .nতপনবাবুর সংসার আর সম্মানের কথা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকলো। আকুল উদ্বেগে aদিনগুলো কাটছিল। hityমোরাং আসতো বনমোরগ বেচতে। আসতো শিখাদের বাড়ীতেও।ওই একদিন এসে বললো a'আমাদের উখানে যাবে দিদি,আমাদের ছেইল্যা দিগে পড়াবে। সবাই তুমাকে মাথায় করে রাখবেক las! এককথায় রাজি হয়ে গেছিল সেদিন। হয়তো পালাতেই চেয়েছিল সে! বলেছিল-' চলো না দিদি একবার দেইখ্য আসবা না হয়!' ngসেই মন কেমনের দিনগুলোয়, বুকের ভেতর আর্ত হাহাকার জেগে ছিল তখনো। গেছিল শিখা সেই aনিবিড় শান্ত পরিবেশে,সেই মৌন স্তব্ধতার মাঝে দর্শনের ছাত্রী শিখা স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিল সেদিন। Bসেই থেকে রয়ে গেছিল সেই বনবাসে! গোটা দশেক বাচ্চাকে পড়াশোনা শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছিল। নিজের কিছু জামাকাপড়, বই আর জমানো কিছু টাকা ছাড়া আর কিছুই আনেনি। প্রকৃতির মাঝে কত কিছুই না পেয়ে যেত! খানিক দূরে একটা মাত্র চায়ের দোকান!সারাদিনে মাত্র দুবার বাস যাওয়া আসা করে। মাসে একবার হাট বসে যখন, আশপাশের গাঁ গঞ্জ থেকে লোক এসে হাটে যাবতীয় বেচাকেনা সেরে নেয়। মোরাং শিখার ভাইকে বলেছিল-'দিদির জন্য কুনো চিন্তা করার দরকার নাই , আমি তো রইলুম। ' মোরাংদের গ্রামে যাবার বছরখানেক পর শহরে গেছিলো,টাকার দরকারে ব্যাঙ্কে গিয়ে তপনবাবুর সঙ্গে আবারো হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেছিল সেদিন। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 188 ব্যাঙ্কের চেয়ারে ঠেস দিয়ে বসেছিলেন, বড়োই ক্লান্ত আর অসহায় লাগছিল তাকে।সে চেহারা আর নেই, চোখ বুজে বসে ছিলেন। পাশে বসে গায়ে হাত দিয়ে ডাকতেই চোখ খুলে শিখাকে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। ক্লান্ত দুচোখের গভীর দৃষ্টিতে শুধুই অভিমান! মনে হলো শিখাকে দেখে কিছু একটা খুঁজে পেয়েছেন । স্ত্রী চলে গেছেন, ছেলেরা বাইরে, বাবাকে নিয়ে যেতে চাইলেও যাননি তিনি,মনের গভীরে বোধহয় সুপ্ত আশা ছিল শিখাকে খুঁজে পাওয়ার। একটা কাজের মেয়ে সকালে এসে বাড়ীর কাজ,রান্না করে রেখে চলে যায় । যেদিন আসে না পাউরুটি ভরসা। সব শুনে শিখা তাকে নিজের কাছে নিয়ে চলে গেল। যাবার আগে কাজের মেয়ের বেতন, দোকানের টুকটাক জিনিস কেনার টাকা, দুধের টাকা সব মিটিয়ে দিয়ে গেল। শিখা খুব যত্নে রেখেছে তাকে। এতটুকুও অযত্ন হতে দেয় না। মুক্ত প্রকৃতির অঙ্গনে শিখার tভালোবাসা আর যত্নে তপনবাবুর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটেছে। শিখার মনেও খুশির অন্ত নেই ,বুকের eগভীরে ইমনের আনাগোনা। মনটা আনন্দে আত্মহারা। যখন তখন বুকের ভেতর থেকে উচ্চকিত .nআনন্দের অণুরণণ \"মোর বীণা ওঠে কোন সুরে বাজি,\" দুজন দুজনকে এত কাছে পেয়ে অদ্ভূত aঅনুভূতিতে আপ্লুত ! আশ্চর্য একটা আকুলতা পরস্পরকে গভীর ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে ityরাখে।শিখার মাথায় হালকা হাতে তেল মাখিয়ে দিতে দিতে বলেন- 'দেখো, পারলে নিজেকে দূরে hসরিয়ে রাখতে! সেই তো কাছে আসতেই হলো ! ' lasa'এটাই যে নিয়তি, ঈশ্বরের ইচ্ছেতেই আমাদের দেখা হয়েছে, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারি নি। না হলে আমার জীবনের পথে কারো ছায়াই পড়লো না, আর তোমার সাথে দেখা হবার পর আমার ngজীবন আমূল বদলে গেল । তোমার প্রেমে পাগল হলাম কিন্তু তোমার সম্পর্কে আমার মনোভাব Baকখনোই প্রকাশ করতে পারি নি আমি। 'বড়ো অন্যায় করেছিলে,যদিও সবই বুঝতে পেরেছিলাম। এত ভালোবেসেও সেদিন আমায় যখন ফিরিয়ে দিলে,বড়ো অভিমান হয়েছিল। তোমার সঙ্গে কতদিন পর দেখা হলো ,আমাকে নিয়ে এলে। নিজের কাছে আগলে রাখলে পরম মমতায়! বলো কোনদিন আমায় ছেড়ে যাবে না তো! তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না শিখা, কথা দাও কোনদিন ছেড়ে চলে যাবে না।' তাড়াতাড়ি মুখে হাত চাপা দিয়ে শিখা বলে -'নাগো এমন করে বলো না, আমিও তো তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। কেউ কাউকে ফেলে চলে যাবো না, দেখো। যখন যাবো একসাথেই যাবো না হয়! \" তপনবাবু বলেছিলেন 'এই স্মৃতি বিজড়িত দিনের মধুর রোমন্থনেই আমাদের ক্ষণিক সুখের উৎসব। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 189 'আমাদের পথ হারানোর খেলা নিছক দুর্ঘটনা নয়! সাজানো সংলাপ,যা সময়ের সাথে বলা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া তুমি জানো! আমায় ভুল বুঝোনা আমিও তো মানুষ!দোষ গুন পাপ পূণ্য অভীপ্সা নিয়ে নিজেকে নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিলাম,জীবনটা অবক্ষয়ের কবলে পড়ে নিঃস্ব,রিক্ত ! আর কিইবা চাইবো মুঠোভর দিন যাপনে!বসন্ত এসে রাঙিয়ে দিক শেষের দিনগুলো।' এসব কথা আজ এত মনে পড়ছে!. মনটা বড়ো কু গাইছে। বেলা পড়ে এলো, বাচ্চাগুলোকেও আজ মন দিয়ে পড়াতে পারেনি। মন লাগবে কী করে! একটু বেরিয়ে দেখবে কিনা, ভাবতে ভাবতেই তপনবাবুকে আসতে দেখল । শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে শিখার বুকের মধ্যে মোচড় পড়ে, তাড়াতাড়ি সামনে মুখ হাতধোয়ার জল দিয়ে চা করতে লাগল। চা খেতে খেতে শুনলো মাঝপথে বাস খারাপ হয়ে কীরকম দুর্ভোগ পোয়াতে হয়েছে যাত্রীদের। সন্ধ্যার পরেই ঝমঝমিয়ে নামলো বৃষ্টি। হালকা করে খিচুড়ি আর হাঁসের ডিমের ডালনা ,বড়ো তৃপ্তি করে খেলো দুজনেই। সর্বত্রই কেমন যেন একটা মনকেমনের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে ,বেশ একটা ঠাণ্ডা tআমেজে মনটা জুড়িয়েদিচ্ছে।লণ্ঠনের স্তিমিত আলোয় ঘরের আলো আঁধারির পরিবেশ আর eপাশের জলভর্তি ডোবায় বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাঙ গুলোর সেই ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ,ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ .nশুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে শিখা । ভোর বেলা নিজেকে আবিষ্কার করে তপনবাবুর aবুকের মাঝে কুঁকড়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। তপনবাবুর হাতের সস্নেহ বন্ধনে আবদ্ধ তখনো। মেঘলা ityআকাশটা মনের আঁচল দুলিয়ে দিতে চাইছে। কী যেন একটা চাই অথচ কী চাই তা বলতে পারবে hনা। 'এ আবার কেমন কথা? ' সত্যিই তো এ কেমন পাগলামি ! দুজনে আজ কত আপন হয়ে উঠেছে aপরস্পর। Banglas****** www.banglasahitya.net

মহামারী গল্প মনীষা পলমল www.banglasahitya.net

মহামারী পৃষ্ঠা || 191 --- মনীষা পলমল মহামারী সকালে পড়ার ঘরে বসে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছে মধুরা। গেটের শব্দে মুখ তুলে দেখে ওর ছাত্রছাত্রী রা মুখে মাস্ক পরে পড়তে এসেছে। পড়া র ঘরে বসেই তাদের সমবেত আরজি- ''ম্যাম, আজকে পড়বো না , তুমি প্যানডেমিকের গল্প বলো! কেন সবাই এতো ভয় পাচ্ছে- কেন ই বা এতো আতঙ্কিত সবাই ?'' etমধুরা বোঝে বাচ্চা গুলোর অহেতুক আতঙ্ক কাটাতে হবে। ও বলে- ''দাঁড়া , তোদের গল্প বলবো, .nআগে তোদের কথা দিতে হবে যে সংক্রমণ রোধের জন্য যা যা নিষেধ তা তোরা মেনে চলবি- yaবার বার সাবান দিয়ে হাত ধুবি- মাস্ক পরবি। '' hitসবাই সমস্বরে বলে উঠলো- \" হ্যাঁ ম্যাম!'' মধুরা শুরু ক‌রে মহামারীর গল্প- saজানিস- বিশ্বে প্রতি ১০০বছর অন্তর একটি কর‌ ে মহামারীর প্রাদূর্ভাব ঘটেছে অতীতে। একটি laরোগের সংক্রমনে র জেরে তা মহামারীর আকার নিয়েছে- যেমন- ১৭২০ তে ''প্লেগ'', ১৮২০ তে g''কলেরা'', ১৯২০ তে ''স্পেনিশ ফ্লু'' আর ২০২০ তে ''করোনা ভাইরাস ''। এই ১০০ বছর অন্তর nমহামারীর আসাটা কী কাকতালীয় নাকি নির্দিষ্ট প্যার্টান কেউ এটা বলতে পারে না । এই মহামারী Baগুলিও একই ভাবে ছড়িয়ে ছিল। ১৭২০ সালের প্লেগ মহামারী কে ''ব্ল্যাকডেথ'' বলা হত! সারা বিশ্বে প্রায়- ২০কোটি মানুষ এর মৃত্যু হয়ে ছিলো এতে॥ প্লেগের মৃত্যু মিছিল ঘটিয়েছিল যে ভাইরাসটি তা হল - ''বুবোনিক প্লেগ''। এর পর ১৮২০ সালে হয়েছিল ''কলেরা''। জলবাহিত এই রোগে ভারত ও পূর্ব এশিয়ায় মারা গিয়েছিল কয়েক লক্ষ নরনারী।দূষিত খাদ্য ও পানী য়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া মুখের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ ক‌রে। এই সময় ইউরোপ ও আফ্রিকায় বসন্ত রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৩৫ লক্ষ মানুশের । www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 192 এর ঠিক ১০০ বছর পর১৯২০ তে হয়েছিল - ''স্পেনিশ ফ্লু''॥ এই ইন ফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর আকার ধারণ কর‌ ে ও মানব দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কে ভেঙে চুরমার ক‌রে দেয় ॥ এটি গুটিবসন্তের বা স্মলপক্স ভ্যারিওলা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত॥ ১৯১৮ সালে শুরু হয় এই মহামারীর। এই রোগে প্রাপ্তবয়স্ক দের চেয়েও তরুণরা বেশী আক্রান্ত হয়েছিল। এই সংক্রমনে ফুসফুসে জল জমে যেত এব্ং শরীর নীল হয়ে মানুষ প্রাণ হারাত। গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কারের ২০০বছর পরেও সারা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। ১৯২০ পর্যন্ত এর প্রকোপ চলেছিল। একে বলা হত- ''দ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যানডেমিক''॥ এর১০০বছর পর ২০২০তে মহামারী রূপে এসেছে- করোনা ভাইরাস॥ এই মারণ ভাইরাসের না ম - ''কোভিড- ১৯''॥ চীনে র উহান থেকে ছড়িয়ে বর্তমানে বিশ্বের ১৫১টি দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস।আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষ! প্রাণ হারিয়েছে ছয় হাজার মানুষ ! ৭০হাজারেরও বেশী রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন । কিন্তু এখন ও একে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি ॥ তাই সতর্ক থাকো॥ স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলো॥ অহেতুক আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই ॥ tসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ কে প্রতিরোধ করতে হবে॥ এর ভ্যাকসিন eআবিষ্কারের চেষ্টা চলেছে- তা সফল হবেই ॥ a.nবাচ্চা গুলোর মধ্যে থেকে রোহিত প্রশ্ন করলো- ''ম্যাম মহামারী বলে কেন ? '' ' ityমধুরা বলে- '' যখন অনেক বড় ভৌগোলিক এরিয়া জুড়ে রোগের প্রকোপ দেখা যায়, তখন ই hতাকে মহামারী বলে॥'' aওদের কৌতুহল মিটলো। হৈ হৈ করতে করতে মুখে মাস্ক পরে ওরা বাড়ি র পথে রওনা দিলো- lasমধুরাও হালকা মনে - ''করোনা র করুণা র'' আপডেট নিতে খবরের কাগজে চোখ রাখলো॥ Bang ***** www.banglasahitya.net

দত্তক গল্প শাশ্বতী দাস www.banglasahitya.net

দত্তক পৃষ্ঠা || 194 দত্তক --- শাশ্বতী দাস \"বলি শুনেছ রায়বাড়ির কথা?\" \"কেন! কি হয়েছে দিদি রায়বাড়ি?\" \"আরে! ওই যে, রায় গিন্নি ওর তো দেমাকে পা মাটিতে পড়ত না, এখন কি হলো? ছেলের বিয়ে হয়েছে এতো বছর তো হয়ে গেল এখনও তো নাতি নাতনির মুখ দেখতে পেলো না। এখন আবার tশুনছি ওরা নাকি সন্তান দত্তক নেবে! তা কি হলো? এতো দেমাকে কোথায় রইল? মরার পর মুখে eআগুনটুকু দেয়ার জন্যও তো কেউ রইল না!\" কথাগুলো একনাগাড়ে বলে সেনগিন্নি একটু শ্বাস .nনিলো। দত্তগিন্নির বাড়ির দাওয়ায় বসে দুজনে সুখ দুঃখের কথা বলছিল। সুখ দুঃখের কথা মানে ওই yaপরনিন্দা পরচর্চা আর কি। দত্তগিন্নি বলল it\"তা কি আর করবে বলো দিদি, ওনাদের টাকা পয়সার তো কোনো অভাব নেই, টাকা আছে তাই hখরচ করবে, আমরা আর কি করবো বলো?\" sa\"আহা তা টাকা থাকলেই কি এইভাবে খরচ করতে হয়? কার না কার পাপ তা কি কেউ এই ভাবে laঘরে তোলে?\" g\"তা যা বলেছ দিদি, এই কথাটাতে আমিও তোমার সাথে এক মত। আরে সবার কি বাচ্ছা হয়? না nহলে কি করা যাবে? তাই বলে অনাথ আশ্রম থেকে একটা বাচ্ছা দত্তক নিতে হবে? ম্যা গো কার না Baকার পাপ!\" \"আমিতো সেই কথাটাই বলছি। \" এর মধ্যে ওখানে দত্তবাবু এসে পৌঁছেছেন। তিনি ঘর থেকে দুজনের বাক্যালাপ শুনতে পাচ্ছিলেন। \"আচ্ছা তোমাদের মেয়েদের কি আর কোনো কাজ নেই? দুই মাথা একজায়গায় হলেই শুধু এ বাড়ির নিন্দা ও বাড়ির নিন্দা। কেন তোমরা দেখতে পাচ্ছ না, ওদের এই ডিসিশন একটা অনাথ বাচ্চাকে ঘর দেবে, পরিচয় দেবে। সেটা তোমাদের একবারও মনে হচ্ছে না? আর তা ছাড়া ডিসিশন টা তো সম্পূর্ণ ওদের, তোমাদের কেন এতো মাথাব্যথা? কাজ না থাকলে যা হয় আর কি। যাও তো এক কাপ চা করে আনো। \" দুজনের সুখের পরনিন্দা পরচর্চায় তখনকার মতো ভাটা পড়ল। এদিকে রায়বাড়িতে তখন জল্পনা তুঙ্গে। অনেক আলাপ আলোচনা করে ঠিক করা হলো \"আমার বাড়ি\" অনাথ আশ্রম থেকেই ওরা বাচ্চা দত্তক নেবে। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 195 অনাদি রায়, মানে রায়বাড়ির বড়বাবু। ছেলে ঋষি আর বৌমা রিনিতা, ওদের সন্তান দত্তক নেয়ার কথাই হচ্ছে। ঋষি বলল ফুটফুটে একটা মেয়ে সন্তান নেবে। আর রিনিতার ইচ্ছে একটা ছেলের। এই নিয়ে দুজনের ঝগড়া। দুজনের ঝগড়ার ইতি টেনে দিলেন অনাদিবাবু।তিনি বলেন \"তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে বরং একটা ছেলে আর একটা মেয়ে দত্তক নিয়ে নাও। দুটো সন্তান একটা পরিবার পাবে, পরিচয় পাবে, সেটাই ভালো নয় কি? \"বাবা তুমি একদম ঠিক বলেছ। সত্যি তোমার মতো এমন ভাবে সবাই যদি ভাবতে পারত তাহলে সমাজটা অনেক সুন্দর হতো। \" আলোচনার মধ্যে রায়গিন্নিও এসে বললেন \" হ্যাঁ রে খোকা, আমরা এখনো এতো অথর্ব হইনি। আমরা সবাই মিলে দুটো বাচ্চাকে ঠিক বড় করে তুলতে পারব। আর ভগবানের আশীর্বাদে আমাদের টাকা পয়সার তো অভাব নেই ওদের ভালো স্কুলে ভর্তি করে উপযুক্ত শিক্ষা দেব। যা যা তোরা আর দেরি করিস না। দাদুভাই দিদিভাইকে নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। আমার যে আর তর সইছে না। \" tদুজনে \"আমার বাড়ি\" অনাথ আশ্রমে এসে পৌঁছল। ওখানকার ইনচার্জ ওদের আপ্যায়ন করে ভিতরে eনিয়ে গেলো। দুজনকে চেয়ারে বসিয়ে জিগ্যেস করলো \"ছেলে সন্তান দত্তক নেবেন না মেয়ে সন্তান?\" .nওরা বলল ওরা একটা ছেলে ও একটা মেয়ে সন্তান দত্তক নিতে চায়। aইনচার্জ ওদের কথা শুনে খুব অবাক হয়ে গেল। বলল ity\"আপনারা দুটো সন্তান দত্তক নিতে চাইছেন কেন? সবাই তো একটা সন্তানই নেয় তবে আপনারা hদুটো সন্তান চাইছেন কেন? দেখুন এখানে আমরা বাচ্চাদের দত্তক দিই যাতে তারা একটা সুস্থ সুন্দর aপরিবার পায় সেই জন্য। এখানে কিন্তু বাচ্চা বিক্রি হয় না। \" las\"না না আপনি আমাদের ভুল বুঝছেন। আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নেই। আমরা সত্যিই দুটো শিশু দত্তক নেবো। আমাদের অর্থনৈতিক কোনো অভাব নেই, অভাব ছিল বাচ্চার। তাই আমরা দুটো ngবাচ্চা দত্তক নিয়ে সেই অভাব পূরণ করতে এসেছি।আপনি আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে aতারপর আমাদের দত্তক দিন। Bকিন্তু আমরা এক সাথে দুটো বাচ্চাই নেব, একটা ছেলে একটা মেয়ে। \" ওদের সমস্ত কাগজপত্র দেখে আশ্রমের ইনচার্জ দুটো শিশু দিতে রাজি হলো। উনি বললেন \"আপনারা নিজেদের ছবি রেখে যান। আমরা আপনাদের খবর দেব। \" ওরা চলে এলো নিজেদের দুটো ফটো জমা রেখে। তার পর থেকে প্রতিক্ষা করেছে কবে খবর আসবে আশ্রম থেকে। আজ সেই দিন। অনাদিবাবু, তার স্ত্রী, ঋষি আর রিনিতা চারজন মিলে পৌঁছল অনাথ আশ্রমের গেটে। গেট থেকে ওদের আপ্যায়ন করে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। একটু পরেই আশ্রমের ইনচার্জ দুটো শিশুকে নিয়ে এলো। ফুটফুটে দুটো নিষ্পাপ শিশু। ওদের দেখে রায়গিন্নির ভারী মায়া হলো। হাত বাড়িয়ে দুজনকেই জড়িয়ে ধরলো। কতই বা বয়স হবে, সবে হাঁটতে শিখেছে।টলমল পায়ে রায়গিন্নির কোলের কাছ ঘেঁষে এসে দাঁড়ালো www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 196 দুটিতে। রায়গিন্নি দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ওদের। তার পর বললেন \"চলো দাদাভাই, দিদিভাই নিজের ঘরে চলো। আমরা তোমাদের নিতে এসেছি। তোমার মা, বাবা, দাদু, ঠাম্মি আমরা সবাই এসেছি তোমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে। চলো এবার বাড়ি যাই।\" আশ্রমের সমস্ত আনুষ্ঠানিক রীতি নীতি পালন করে সন্তানদের নিয়ে ওরা রায়বাড়ি ফিরে এলো। প্রতিবেশীরা সবাই সকাল থেকেই উসখুস করছে রায়বাড়িতে কাকে দত্তক নেওয়া হচ্ছে জানার জন্য। এতো বড় সম্পত্তির মালিক কে হবে তা দেখার লোকের কৌতূহল তো কম না। সেই কারণেই চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জন করার জন্য সবাই ওঁত পেতে আছে। সবার সব কৌতূহলের অবসান ঘটিয়ে রায়বাবু তার দুই নাতি নাতনি সহ সপরিবারে রায়বাড়িতে প্রবেশ করলেন। দত্তগিন্নি আর সেনগিন্নি ও পেছন পেছন রায়বাড়ি ঢুকল। এমন একটা মুহূর্তের সাক্ষী না থাকলে কি চলে? পরে রং চড়িয়ে পাড়ায় সব বাড়ি বাড়ি টাটকা খবর পরিবেশন করতে হবে না! এই সুযোগ হাত ছাড়া করে কি করে! অতএব দুজনে রায়বাড়িতে ওদের পেছন পেছন ঢুকে গেল। বাড়িতে ঢুকে ওদের তো চক্ষু চড়কগাছ! ফিসফিস করে বলল \"ও দিদি, এতো দেখি দু দুটো পাপ উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। ছি ছি! টাকা পয়সা tথাকলেই কি এ ভাবে খরচ করতে হয়? কেন, কতো গরীব মানুষের বাচ্ছা আছে, তাদেরকেও তো eটাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারে! তা না ম্যা গো ঘেন্না ঘেন্না!\" মুখে বলল \"কই গো দিদি তোমার .nনাতি নাতনিদের মুখ দেখি। কি আর করবে বলো নিজের রক্তের না হলেও দুটো বাচ্ছা তো; দুধের aস্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি!\" ity\"কেনো গো দিদি? এমন ফুফুটে মিষ্টি বাচ্ছা দুটো দেখে তোমাদের মন ভরলো না? এখানেও hকূটকাচালি করতে এলে? তা এসছো যখন মিষ্টি মুখ করে যেও।\" aদত্তগিন্নি আর সেনগিন্নি সুবিধা হবে না বুঝে তাড়াতাড়ি রায়বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এলো lasবটে, কিন্তু রং চড়িয়ে পরিবেশন করতে ছাড়ল না। রায়বাবু বিচক্ষণ লোক, তাই তিনি সবকিছু আগেই চিন্তাভাবনা করে ঠিক করে রেখেছিলেন যে ngতাদের দত্তক নেওয়া নাতি নাতনিকে তিনি তাদের আসল পরিচয় আগেই জানিয়ে রাখবেন যাতে aকেউ তাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে ঘর পোড়াতে না পারে। যদিও দত্তগিন্নি আর সেনগিন্নি চেষ্টার Bকোনো ত্রুটিই করে নি। এর পর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর। সেদিনের সেই ফুটফুটে ছেলেটি আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। রায়বাবু নাতির নাম রেখেছিলেন জ্যোতির্ময়। সত্যিই তার জ্যোতিতে রায়বাড়ির নাম উজ্জ্বল হয়েছে। পড়াশোনায় বরাবরের ভালো ফল করা ছাত্র আজ বৈজ্ঞানিক হয়ে দেশে ফিরেছে। ওর ইচ্ছে দেশে ফিরে দেশের জন্য কাজ করার। নাতনির ও বিয়ে হয়েগেছে। সে এখন স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করছে। রায়গিন্নি এখন বার্ধক্যের ভারে ন্যুব্জ। কিছুদিন হলো রায়বাবু ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছেন। রায়গিন্নির এখন ইচ্ছে নাতির বিয়ে দিয়ে তাকে সংসারী করে নিশ্চিন্ত হয়ে স্বর্গে যাবেন। ঠিক এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলো সেন গিন্নি আর দত্ত গিন্নি। মুখে যতই নাক শিটকাক মনে মনে তো রায়বাড়ির বৈভবের দিকে দৃষ্টি আছেই। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 197 তাই ওরা যেই মুহূর্তে শুনেছে রায়গিন্নি নাতির বিয়ে দেবেন, তখুনি সেনগিন্নি দত্তগিন্নিকে লুকিয়ে রায়বাড়ি চলে এসেছে নিজের নাতনির কথা পাড়তে। রায়গিন্নি সব শুনে বললেন \" তা আমার নাতবৌ যে হবে সে তো যে সে মেয়ে হলে চলবে না, এই বাড়ির ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রাখতে পারবে এমন মেয়েই আমার চাই। তা তোমার নাতনি পড়াশোনা কতদূর করেছে?\" আমার নাতনি এবার বাংলায় এম এ করেছে।দেখতে খুব সুন্দর হয়েছে। আর গায়ের রং! চাঁপা ফুলের মতো। তোমার নাতির খুব পছন্দ হবে। \" \"আচ্ছা তোমার নাতনির একটা ছবি রেখে যাও আমি নাতিকে দেখাই ওর মা বাবাও দেখুক তার পর তো পছন্দ!\" আচ্ছা দিদি, এই নাও এই আমার নাতনির ফটো; এটা তোমার নাতিকে দেখিও। আর হ্যাঁ, আর একটা কথা, আমি এখানে আমার নাতনির সম্বন্ধ নিয়ে এসেছি এই কথাটা যেন দত্তগিন্নির কানে না পৌঁছয়। দিদি এই কথাটা একদম তোমার আর আমার মধ্যে থাকলো, পাকা কথা হওয়ার পর তো tসবাই জানবেই তখন। \" e\"আরে না না আমি কারো বাড়ি যাই না কথা চালা চালি করতে।ও স্বভাব আমার নেই।\" .nসেনগিন্নি বুঝলেন রায়গিন্নি তাকেই ছোট্ট করে ঠুকে দিলেন। কিন্তু এই অপমানটা সেনগিন্নি হাসি মুখে aহজম করে নিলো রায়বাড়ির বিশাল সম্পত্তির কথা মাথায় রেখে। ityএদিকে দত্তগিন্নিও তক্কে তক্কে আছে রায়গিন্নির কাছে কথাটা পাড়তে হবে। যতই নাক শিটকাক ওই hবাচ্ছা দত্তক নেওয়া নিয়ে, কিন্তু একথা তো মানতেই হবে, শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে সেই ছেলেই aরায়বাড়ির মুখ উজ্জ্বল করেছে। রায়বাড়ির ওই বিশাল সম্পত্তির ওই তো একমাত্র উত্তরাধিকার। তাই lasওই ছেলের বউ করার জন্য সব বাবা মা-ই মুখিয়ে আছে। যার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে সেই হবে রায়বাড়ির রাজরানী। angভোর হতে না হতে দত্তগিন্নি হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। দত্তবাবু দেখতে পেয়ে গলা Bউঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল- \"বলি চললে কোথায়? রান্নাবান্না কিছু কি নেই? সকাল থেকেই পাড়া বেড়াতে শুরু করলে আর পরনিন্দা পরচর্চা! এছাড়া তোমার আর কোনো কাজ নেই?\" দত্তগিন্নি কোনো কথা কানেই তুলল না। সোজা এসে ঢুকলো রায় বাড়ি। \"দিদি বাড়ি আছো?\" \"কে গো?\" \"আমি, দত্তগিন্নি;\" \"ও! তা এতো সকালে কি মনে করে?\" আমি সকাল সকাল এলাম তোমার কাছে কথাটা পাড়তে। একা যে আসবো সে জো নেই, সব সময় সেনগিন্নি তক্কে তক্কে থাকে। নিজের নাতনির সম্বন্ধ নিয়ে আগে এই বাড়ি আসবে সেই মতলব এঁটেছে। আমি আজ তাই ঘুম ভাঙতেই চলে এসেছি। এই দেখো গো দিদি আমার নাতনির ছবি। রূপে লক্ষ্মী গুনে সরস্বতী। www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 198 নিজের মুখে কি আর বলব, ও রকম মেয়ে এই তল্লাটে একটাও পাবে না। তুমি শুধু একবার আমার নাতনিকে দেখতে বলো, তোমার নাতির পছন্দ না হয়েই যায় না, এই আমি বলে দিলাম। \"কিন্তু দিদি, আমার নাতি তো ওর বিয়ের মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছে। তোমার নাতনি সে যতই রূপে লক্ষ্মী গুনে সরস্বতী হোক না কেনো আমাদের আর পাত্রী দরকার নেই। \" রায়গিন্নির কথায় দত্তগিন্নি একটা বড় ঝাঁকানি খেলেন। কিন্তু বুঝতে না দিয়ে উনি বললেন \" সেনগিন্নি এসেছিল বুঝি নাতনির ছবি নিয়ে? জানি, নিজের নাতনিকে এই বাড়ির বউ করার জন্য অনেক দিন থেকেই ওর জিভ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। অথচ এই ছেলেকে নিয়ে কত কুৎসা না করে ছিলো!এখন কি হলো! সেইতো নিজের নাতনিকে গছিয়ে দিলি!\" \"আরে না না, তোমার কি মনে হয়? আমি জানি না সে কথা! আমি সব জানি। কে কে আমার নাতি নাতনিকে নিয়ে কি কি বলেছে আমি সব জানি। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকো সেনগিন্নির নাতনি আমার নাতবউ হচ্ছে না। ওর বিয়ে হচ্ছে কলকাতার নামকরা সিংহরায় বাড়ির মেয়ের সঙ্গে। ওরা একসাথে কলেজে পড়ত। খুব গুণী মেয়ে। দেখতেও খুব মিষ্টি। একদম আমাদের পাল্টি ঘর। tএইতো সামনের মাঘেই বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। সবাই নেমন্তন্ন পাবে। এসে বর বধূকে আশীর্বাদ eকরে ভোজ খেয়ে যেও। এখন আমার পুজোর সময় হলো গো দিদি তুমি এখন এসো। \" .nদত্তগিন্নি অপমানটা হজম করে মুখ নিচু করে রায়বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। ঘরে ঢোকার মুখেই aস্বামীর সঙ্গে দেখা। দত্তবাবু বউয়ের মুখ দেখেই বুঝেছেন কিছু একটা ঘটেছে। শুধু মুখে বললেন ity\"অন্যের ঘরে আগুন লাগানোর আগে নিজের ঘরটা দেখে নিও সে ঘরটা খড়ের তৈরি কিনা!\" hরায়গিন্নির অপমানটা হজম করলেও স্বামীর অপমানটা দত্তগিন্নি আর সহ্য করতে পারলো না। ঝড়ে aভাঙা গাছের মতো মাটিতে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল। Banglas***** www.banglasahitya.net

মাটি মাখা ভাঙা মনের পুরাণ প্রবন্ধ মনীষা পলমল www.banglasahitya.net

পৃষ্ঠা || 200 মাটি মাখা ভাঙা মনের পুরাণ ---মনীষা পলমল মাটি মাখা ভাঙা মনের পুরাণ বাঙালি সংস্কৃতির ভিত্তিভূমিটি প্রোথিত আছে লোক সংস্কৃতির মধ্যেই। আর এই লোক সংস্কৃতির কেন্দ্রে বিরাজ করছেন লোক দেবতাগণ। কৌম সমাজের যুথবদ্ধ চিন্তা-চেতনার ফসল লোকদেবতা। লোকদেবতা বৃন্দ অশাস্ত্রীয় ও তথাকথিত নিন্ম বর্গের উপাস্য ফলে বর্ণ হিন্দু সমাজের কাছে উপেক্ষিত অথবা বাম হস্তে পূজায় সন্তুষ্ট। etবনের ভেতর ,ঝোরার গায়ে ,ডুঙ্গরি টিলায় ও শাল মহুয়া অশথ্থ বটের তলায় তাদের আশ্রয়। .nপরিবেশে যেখানে একটু বিস্ময়ে র অবকাশ আছে, আতঙ্কের ছোঁয়া যেখানেই লোকদেবতা পেতেচান yaতাঁর আসনটুকু সেখানেই। অখোদিত শিলাখণ্ড মাটির বেদি, স্তুপ পোড়ামাটির কিছু ছলন( itপোড়ামাটির হাতি-ঘোড়া-বাঘ প্রভূতির মূর্তি) প্রতীকী শিলা- দেবতার আবয়বিক রূপ। পূজক hনিম্নবর্গীয় মানুষ।ভক্ত জনের ভক্তি ও বিশ্বাসে তার প্রতিষ্ঠা। প্রার্থনা রোগমারীর সংক্রমণ থেকে মুক্তি, saবন্ধ্যাত্ব মোচন, শস্য বৃদ্ধি প্রভৃতি ইহলৌকিক কামনা! laবার্ষিক পূজা রবিবাসরীয় সংক্রান্তি ,পৌষের মকর সংক্রান্তি ,চৈত্রের বারুণী সংক্রান্তিতে। উৎসব gউদযাপন হয় নিম্নবর্গীয় মাঝি পাহান দেয়াসী দেহুরীর পরিচালনায়। পুজোর অর্থ আহরিত হয় Banগ্রামবাসীদের কাছ থেকে \"মাঙন \"এর মাধ্যমে! বাংলার এই দেবকুল এর আবির্ভাব কিভাবে হয়েছে? বাংলার এই লৌকিক দেব কুলের স্রষ্টা কে? এই প্রশ্ন স্বভাবতই জাগে! জলে- বৃক্ষে -প্রস্তরে -যার ঐশী শক্তিতে বিশ্বাস লোক স্তরের সেই আদিগন্ধী মানুষদের দানে এই দেব কুলের আবির্ভাব। বাংলার অজস্র কৌমগোষ্ঠীতে বিভক্ত আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠীর দান এই লৌকিক দেবতারা। বাংলার তথাকথিত তপশিলি জাতি -উপজাতির কীর্তি! কোলীয় ও অস্ট্রিক সাঁওতাল মুন্ডা কোড়া শবর দের বৃক্ষ- প্রস্তরের জডাত্মাবাদে বিশ্বাস, দ্রাবিড়ীয় কেওট কৈবর্ত কাঁডরা কদমা প্রভৃতি আদি দ্রাবিড়ীয় জনগোষ্ঠীর মাতৃতান্ত্রিকতা, নারী-পুরুষের যুগল সাধনা এই লোকস্তরের দেব ভাবনা স্তর গড়ে তুলেছিল। এই দুই জনজাতির পারস্পরিক আদান- প্রদানে এই মিশ্র সংস্কৃতির লৌকিক দেব ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। এর ওপর নবীন পলির প্রলেপ বুলিয়ে ছিল আর্য ভারতের পৌরাণিক দেবধারা। www.banglasahitya.net


Like this book? You can publish your book online for free in a few minutes!
Create your own flipbook